ভাঙ্গুড়ার রাজনীতিতে তিন প্রজন্মের যাত্রা শুরু

Looks like you've blocked notifications!
পাবনার ভাঙ্গুড়ার প্রথম প্রজন্ম প্রয়াত হাজি মো. মহসীন আলী, তাঁর ছেলে সংসদ সদস্য আলহাজ মো. মকবুল হোসেন ও নাতি নবনির্বাচিত পৌর মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল (বাঁ থেকে)। ছবি : এনটিভি

পাবনার ভাঙ্গুড়ার রাজনীতিতে তিন প্রজন্মের যাত্রা শুরু হয়েছে। ভাঙ্গুড়া পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল সর্বাপেক্ষা তরুণ জনপ্রতিনিধি। তাঁর নির্বাচনী প্রচারে অন্যতম স্লোগান ছিল ‘প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের জনসেবা’। 

গোলাম হাসনাইন রাসেল প্রজন্মের প্রথম পুরুষ ছিলেন চলনবিলের খ্যাতিমান সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব হাজি মো. মহসীন আলী। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ইন্তেকাল করেন।

মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পাশাপাশি হাজি মো. মহসীন আলীর প্রধান লক্ষ্যই ছিল মানবসেবা  তথা জনসেবা। দুই যুগের বেশি সময় তিনি ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের প্রথমে প্রেসিডেন্ট ও পরে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন তিনি ভাঙ্গুড়ায় একটি সরকারি হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেন কিন্তু ইউনিয়ন পর্যায়ে এমন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সরকারের অপারগতার কারণে তিনি ব্যথিত হন। পরে তিনি কলেজ স্থাপনে উদ্যোগী হন। কয়েকজন দানশীল ব্যক্তির সহায়তায় ১৯৭০ সালে ভাঙ্গুড়ায় বড়াল নদীর পারে তিনি গড়ে তোলেন ‘হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ’। এটি এ অঞ্চলের এখন অন্যতম বড় বিদ্যাপিঠ। তিনি ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন হাইস্কুল, শরৎনগর ফাজিল মাদ্রাসা এবং জরিনা-রহিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তখন ফরিদপুর থানার ইউনিয়ন ভাঙ্গুড়াকে থানায় পরিণত করেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ‘হাজী গয়েজ উদ্দিন মহিলা মাদ্রাসা’ ও ভাঙ্গুড়া মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। 

হাজি মো. মহসীন আলীর একমাত্র ছেলে বর্তমানে আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মো. মকবুল হোসেন ওই প্রজন্মের দ্বিতীয় পুরুষ। ১৯৮২ পর্যন্ত তিনি ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। উপজেলা প্রতিষ্ঠার পর তিনি পর পর দুইবার ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর তিনি দুইবার পাবনা-৩ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সৎ,কর্মঠ ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিক হওয়ায় তিনি প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান। 

সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের জ্যেষ্ঠ ছেলে গোলাম হাসনাইন রাসেল প্রজন্মের তৃতীয় পুরুষ হিসেবে আওয়ামী লীগের মূল রাজনীতিতে আসীন হন। ২০১৫ সালে দলের কাউন্সিলে তিনি ভাঙ্গুড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। হাজি মো. মহসীন আলীর বংশ পরম্পরায় আওয়ামী রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটে গোলাম হাসনাইন রাসেলের। 

এ সময় স্থানীয় রাজনীতিতে যথেষ্ঠ আস্থাহীনতার বাতাস বইছিল। পৌরবাসী খোঁজ করেন মাদকমুক্ত, ভদ্র ও বিনয়ী একজন রাজনীতিকের। শুরু হয় প্রজন্মের অনুসন্ধান। একজোট হন জনতা। আবারও দাবি তোলেন হাজি মহসীন আলীর দৌহিত্রকে পৌর পিতার দায়িত্ব নিতে। এর মধ্যে ঘোষণা হয় পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল। স্থানীয়দের চাপের মুখে আলহাজ মকবুল হোসেন ছেলেকে মেয়র পদে নির্বাচনের অনুমতি দেন। 

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য গোলাম হাসনাইন রাসেলকে দলের টিকেট দেন এবং হাতে তুলে দেন নৌকা প্রতীক। স্বতঃস্ফূর্ত উৎসবমুখর নির্বাচনের মাধ্যমে পৌরবাসী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী ও প্রজন্মের তৃতীয় পুরুষকে জয়যুক্ত করেন।
 
গোলাম হাসনাইন রাসেল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার কাছে পৌরবাসীর প্রত্যাশা অনেক বেশি। পৌর পিতা হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে নাগরিকদের সে আশা আমি পূরণ করব। এই বিশ্বাসের যেন ফাটল না ধরে তার জন্য সজাগ দৃষ্টি রাখব।’

ভাঙ্গুড়ার পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র রাসেল বলেন, ‘ভাঙ্গুড়া পৌরসভাকে মাদকমুক্ত সুন্দর, সুশৃঙ্খল, পরিচ্ছন্ন ও আলোকিত মডেল নগর হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করব। এ ছাড়া প্রজন্মের প্রতি এখানকার মানুষের মনে যে ভালোবাসার নীড় তৈরি হয়েছে তা অটুট রাখব।’