স্যামসন এইচ চৌধুরীর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী মঙ্গলবার

Looks like you've blocked notifications!
স্কয়ার গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী। ছবি : এনটিভি

সততা, নিষ্ঠা, শ্রম, মেধা ও শৃঙ্খলা একজন মানুষকে কত ওপরে নিয়ে যেতে পারে তার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত স্কয়ার গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী। যিনি প্রচণ্ড আস্থা ও মনোবলকে পুঁজি করে শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছেছিলেন।

এ দেশের শিল্প ও ব্যবসা প্রসারের ক্ষেত্রে যাঁর অবদান প্রশংসনীয়, প্রতিকূল অবস্থাকে পাশ কাটিয়ে শূন্য থেকে স্কয়ার গ্রুপ যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে, তিনি প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী। ৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার তাঁর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী।

দেশবরেণ্য এই শিল্পপতির মৃত্যুদিবসে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে পাবনার এস্ট্রাস খামারবাড়িতে প্রার্থনা সভা এবং পাবনা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন স্মরণসভার আয়োজন করেছে।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯২৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার কাশিয়ানী থানাধীন আড়ুয়াকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন ইয়াকুব হোসেন চৌধুরী। স্যামসন চৌধুরী ভারতে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৫২ সালে পাবনার আতাইকুলায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একটি ফার্মেসির মেডিকেল অফিসার।

ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার প্রতি স্যামসন এইচ চৌধুরীর আগ্রহ ছিল। প্রথমে নিজে বাবার নামের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করেন ‘ই-সনস’ নামক ওষুধ  তৈরির কারখানা। পরে বাবার কাছ থেকে পুঁজি নিয়ে ১৯৫৮ সালে চার বন্ধু মিলে পাবনা শহরে শালগাড়িয়া এলাকায় গড়ে তোলেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস নামে প্রথম ওষুধ কারখানা। স্কয়ার আজ বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ। বর্তমানে স্কয়ার ফার্মায় ২৮ হাজারসহ স্কয়ার গ্রুপের ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।

১৯৮৮ সাল থেকে ওষুধের পাশাপাশি নতুন শিল্প স্থাপন শুরু করে স্কয়ার। ওই সময়ে স্কয়ার ফার্মার একটি আলাদা বিভাগ হিসেবে স্থাপন করা হয় স্কয়ার ট্রয়লেট্রিজ লিমিটেড। এরপর একে একে স্থাপিত হতে থাকে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৫ সালে স্কয়ার টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ শুরু করে। স্কয়ারের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ টেক্সটাইল খাতে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভোগ্যপণ্য।

বর্তমানে স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্কয়ার স্পিনিংস, স্কয়ার টয়লেট্রিজ, স্কয়ার কনজিউমার প্রোডাক্টস, স্কয়ার ইনফরমেটিকস, স্কয়ার সারাহ নিড ফেব্রিকস, স্কয়ার হসপিটালস, স্কয়ার অ্যাগ্রো, স্কয়ার হারবাল অ্যান্ড নিউট্রিসিটিক্যাল, এজিএস সার্ভিসেস, মাছরাঙা প্রডাকশন, প্যাকেজেস, বর্ণালী প্রিন্টার্স লিমিটেড ও মিডিয়া কম ও মাছরাঙা টেলিভিশন। এ ছাড়া আবাসন প্রতিষ্ঠান শেলটেক, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে স্কয়ার গ্রুপের শেয়ার রয়েছে।

জীবনালেখ্য

স্যামসন এইচ চৌধুরী ঢাকার ঐতিহ্যমণ্ডিত ব্যবসায়ীদের সংগঠন মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি, মাইডাসের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফার্মাসিটিউক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বাংলাদেশ পাবলিক লিসটেড কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন, চেয়ারম্যান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড, ঢাকা ক্লাবের আজীবন সদস্য, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ-ফ্রান্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী সদস্য, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইসিসিআই) সহসভাপতি, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ হারবাল প্রোডাক্টস প্রস্তুতকারক সমিতির প্রেসিডেন্ট, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান, টিআইবির সাবেক চেয়ারম্যান ও ট্রাস্টি, শাহবাজপুর টি এস্টেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ছিলেন। 

এ ছাড়া স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯৯৮ সালে আমেরিকান চেম্বার কর্তৃক বিজনেস এক্সিকিউটিভ অব দ্য ইয়ার, ২০০০- ২০০১ সালে ডেইলি স্টার ও ডিএইচএল কর্তৃক বেস্ট এন্টারপ্রেনার অব দ্য কান্ট্রি, ২০০৩ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংক অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০০৫ সালে ব্যাংকার্স ফোরাম অ্যাওয়ার্ড ও ২০০৬ সালে আইএসএবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে পরপর দুই বছর দেশের সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৫ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক সেরা করদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পান। ২০০৯ ও ২০১০ সালে সিআইপি মনোনীত হন। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে তিনি পরলোকগমন করেন। তাঁকে পাবনা শহরের কাশীপুরের বাসভবন এস্ট্রাসে সমাহিত করা হয়।

স্যামসন এইচ চৌধুরী দেশের শীর্ষ শিখরে পৌঁছালেও ভুলে যাননি অতীত। তিনি পাবনাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি পাবনার অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির আধুনিকায়ন করেন। বনমালী ইনস্টিটিউট, পাবনা প্রেসক্লাবসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে তিনি সহায়তা করেন। তিনি ছিলেন পাবনা প্রেসক্লাবের সম্মানিত সদস্য। এ ছাড়া পাবনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তাঁর অবদান। তিনি পরলোকে চলে গেলেও এসব প্রতিষ্ঠান তাঁকে স্মরণ করবে চিরকাল।