সংবাদ সম্মেলন ডাকতেই বিএনপি নেতার বাড়ি ঘিরল বিজিবি, পুলিশ

Looks like you've blocked notifications!
পূর্ব নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন নির্দিষ্ট স্থানে করতে না পেরে আজ সোমবার সকালে শহরের পাওয়ার হাউস রোডে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে জেলা বিএনপির নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন। ছবি : এনটিভি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে জেলা বিএনপির ডাকা একটি সংবাদ সম্মেলন ঘিরে জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি ছিল ব্যাপক। আজ সোমবার সকালের সেই পূর্ব নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনস্থল এবং এর আশপাশে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের নেতৃত্বে চার প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), বিপুল সংখ্যক পুলিশ ছাড়াও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

ফলে জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচির শহরের মোড়াইলের বাসভবনে বেলা ১১টায় ডাকা আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনটি ভেস্তে যায়। যদিও পরে জেলা বিএনপি নেতারা পাশের পাওয়ার হাউস রোডে দাঁড়িয়েই স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সেই সংবাদ সম্মেলন করেন।  

গত ১২ জানুয়ারি মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও সরকারসমর্থকদের সংঘর্ষ এবং নির্যাতনে এক মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু, শহরজুড়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, পুলিশের দায়ের করা মামলায় বিএনপি নেতাদের আসামি করা- এসব বিষয় নিয়েই এ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল জেলা বিএনপি।

তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিএনপির সংবাদ ঘিরে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল, সেখানে নাশকতা হতে পারে। তাই সেখানে পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছিল।’  

পাওয়ার হাউস রোডে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পূর্ব নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার কারণেই আমাদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে হচ্ছে।’ 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাম্প্রতিক ঘটনার সঙ্গে বিএনপি নেতাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ঘটনার সময় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ বা স্টিল ছবি পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে কোথাও বিএনপির নেতা-কর্মীরা আছে কি না। উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাতেই বিএনপিকে এ ঘটনায় জড়ানো হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির নেতারা মাদ্রাসাছাত্র নিহত ও শহরজুড়ে ভাঙচুরের ঘটনার নিন্দা জানান। তারা পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশে কাউকে হয়রানি না করার আহ্বান জানান।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন বলেন, গত ১১ জানুয়ারি ঘটনার দিনই জেলা বিএনপির ৪৪ জন নেতা-কর্মী হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে ৭৭ দিন পর জেল থেকে মুক্তি পান।

তাদের প্রায় সবাইকে পুলিশের দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে। এমনকি  কারান্তরীণ জেলা বিএনপির নেতা মাহমুদুর রহমান মাহিনকেও সেই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন চলাকালে যৌথ বাহিনীর গাড়িবহর পাওয়ার হাউস রোডে ঢুকে পড়ে। তখন বিএনপির নেতাকর্মীরা দৌড়ে পালিয়ে যান। 

১১ জানুয়ারি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ওইদিন বিকেলে কাওমি ছাত্র ঐক্য পরিষদের সেক্রেটারি খালেদ মোশাররফ কাউতলী যাওয়ার পথে জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে বিজয় টেলিকমের মালিক পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. সেলিম মিয়ার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা রনি এবং মার্কেটের সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল খানের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মোশাররফকে নাজেহাল করা হয়। নাজেহালের খবর মাদ্রাসায় পৌঁছামাত্র ছাত্ররা দলবদ্ধ হয়ে বিজয় টেলিকমে হামলা করে। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ‘এ খবর সারা শহরে ছড়িয়ে পড়লে এর প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা লগি, বৈঠা ও অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জয়বাংলা স্লোগানে মিছিল সহকারে পুলিশকে নিয়ে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসায় হামলা চালায়। পরবর্তী সময়ে মাদ্রাসায় হামলার সময় ব্যবহৃত গুলি-টিয়ার শেল জায়েজ করার জন্য বিএনপির বিরুদ্ধে সাজানো ও ভুয়া মামলা দেয় পুলিশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোনো লোকই বলতে পারবে না ওই সময় বিএনপি মিছিল করেছে।’  

এ সময় জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) ছাত্র হাফেজ মাসুদুর রহমান নিহত হন। এ ঘটনায় ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ক্ষুব্ধ মাদ্রাসাছাত্ররা রেলস্টেশন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, উপমহাদেশের সুরসাধক ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিচিহ্ন তছনছ করে।এ ঘটনায় এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১২টি মামলা করা হয়েছে যাতে আসামি করা আট হাজার লোককে। 

এসব ঘটনায় যুবদল নেতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঁরা হলেন সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সায়েদুল ইসলাম সাহেদ। তাঁকে সদর উপজেলার ছয়বাড়িয়াস্থ গ্রামের বাড়ি থেকে গতকাল রোববার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গত শনিবার রাতে শহরের কান্দিপাড়া মহল্লার রাব্বি মিয়া (২৫), মধ্যপাড়া মহল্লার শাহজাহান মিয়া (২৬) ও ছোটন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সদর মডেল থানার ওসি মো. মাইনুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সোর্স থেকে প্রাপ্ত খবরের ভিত্তিতে তাঁদের আটক করা হয়েছে।