অবসরে গিয়ে রায় লেখা যাবে, যাবে না

অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থী বলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে আইনজ্ঞদের থেকে মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
একপক্ষে বলা হচ্ছে, প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্য সঠিক হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যে রায় লেখা হয়েছে তা অবৈধ।
অন্যপক্ষ বলছেন, অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতি রায় লিখতে পারেন। এ নিয়ম বহুদিন থেকে চলে আসছে।
প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যে বিএনপির নেতারাও নড়েচড়ে বসেছেন। আজ বুধবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধান বিচারপতির কথা অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের রায় অবৈধ।
গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তিতে দেওয়া বাণীতে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারপতিদের অবসরে গিয়ে রায় লেখা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী। কোনো কোনো বিচারক রায় লিখতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেন, আবার কেউ কেউ অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আদালতে মামলার রায় ঘোষণার পর কোনো বিচারপতি অবসরে গিয়ে ওই মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় লিখতে পারবেন, লেখার সুযোগ আছে। এ রকম অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় নজিরও আছে। তিনি বলেন, উপমহাদেশসহ সব জায়গায় বহুদিন ধরে এ নিয়ম চলে আসছে। বাংলাদেশ হওয়ার আগে পাকিস্তান আমলেও এ নিয়ম চালু ছিল। বিচারকের আসনে অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে এটি অবসরে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় লিখলে বাধা নেই। অবসরে গিয়ে সে বিচারপতি নতুন করে তো কোনো রায় দিচ্ছেন না। তবে কোনো মামলা আদালতে শুনানির পর রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখে অবসরে গিয়ে রায় লেখার সুযোগ নেই, নজিরও নেই।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রায় লেখা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি তাঁর বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ বক্তব্য দিয়েছেন। কিছু কিছু বিচারপতি যেহেতু রায় লিখছেন না, তারই প্রেক্ষাপটে তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন।’
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘অবসরে যাওয়ার পর নয়, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বেঞ্চে থেকেই রায় ঘোষণা করেছিলেন।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে খায়রুল হকের দেওয়া রায় কেন অবৈধ হবে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান পরিপন্থী বলে যে রায় দিয়েছিলেন, তার কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই, এটি অবৈধ। কারণ বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক কেয়ারটেকার সরকার বাতিলের রায় অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পর স্বাক্ষর করেছিলেন।’
মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার উক্ত অবৈধ রায়ের সুযোগে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দ্বারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বিলুপ্ত করেছে।’
প্রবীণ এ আইনজীবী নেতা আরো বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাবে যে সংকট ও অস্থিরতা চলছে তার একমাত্র কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন। আর এই বাতিলের পেছনে ভূমিকা রেখেছেন এ বি এম খায়রুল হকের সংবিধান পরিপন্থী ওই অবৈধ রায়।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘চিফ জাস্টিস (প্রধান বিচারপতি) এত দিন পর আজ এ বিষয়ে মুখ খুললেন। আমরা এত দিন ধরে এ কথাই বলে আসছিলাম।’