টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডে ‘দায়মুক্তি’ চায় নাইকো

টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডে নাইকো দায়মুক্তি চায় বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তিনি বলেছেন, নাইকো আন্তর্জাতিক আদালতে দুটি মামলা করেছে- একটিতে তারা সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম চাচ্ছে, অপরটিতে নাইকোর দোষে যে ব্লো-আউট (বিস্ফোরণ) হয়নি, এর ডিক্লারেশন (ঘোষণা) চাচ্ছে তারা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সেগুলো মোকাবিলার জন্য বিখ্যাত ল’ ফার্ম ফোলি হগ এলএলপিকে নিয়োগ করেছি। আমরা আশা করছি, এই মামলায় আমরা জিতব।’
আজ শুক্রবার দুপুরে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের পরিত্যক্ত টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন। পরিদর্শনের সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আহমদ, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতিকুজ্জামানসহ পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
প্রতিমন্ত্রী জানান, নাইকো কানাডিয়ান আদালতে স্বীকার করেছে দুর্নীতির মাধ্যমে তারা এখানে কাজ পেয়েছিল। তখনকার জ্বালানিমন্ত্রীর নামোল্লেখ করেও তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিএনপি সরকারের শাসনামলে নাইকোর সঙ্গে আইনিভাবে মোকাবিলার জন্য যে ডকুমেন্ট ছিল, সেগুলো নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল, আমরা সেগুলো সংগ্রহ করছি। যারা এই মামলা নষ্ট করতে চেয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে, কানাডিয়ান কোর্ট থেকে এই মামলারও ডকুমেন্ট সংগ্রহের কাজ চলছে।’
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আহমদ বলেন, ‘ফোলি হগ এলএলপি আমাদের পক্ষে কাজ করেছে। এই ফার্মই বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলাতেও কাজ করেছে। এই মামলায় আমাদের বিজয় হয়েছে। নাইকো দায়মুক্তির দাবি করেছে। ফোলি হগ এলএলপি এই এলাকায় তাদের আইন বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞকে পাঠিয়েছে। আর এই এলাকায় যে ক্ষতি হয়েছে, তার একটা বাস্তব প্রতিফলন ক্ষতিয়ে দেখার জন্য তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের আমরা সহযোগিতা করছি।’
এদিকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার এলাকায় টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র বিস্ফোরণের পর আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে নাইকোর দায়ের করা দুটি মামলা মোকাবিলার জন্য পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের নিয়োজিত কাউন্সেলিং প্রতিষ্ঠানের ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল বুধবার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে পরিবেশ, মানুষের স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং গ্যাসের চাপ পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রতিনিধিদল আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টেংরাটিলা এলাকার আশপাশের গ্রামের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন।
২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি রাত ১০টায় টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে প্রথম দুর্ঘটনা ঘটেছিল। আগুনের তাপে ওই দিন গভীর রাতেই গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন কূপের রিগ ভেঙে আগুন ২০০ থেকে ৩০০ ফুট ওঠানামা করছিল। পরে এক মাসেরও বেশি সময় জ্বলার পর আগুন আপনাআপনি নিভে যায়।
এরপর দ্বিতীয় দফা বিস্ফোরণ ঘটেছিল একই বছরের ২৪ জুন রাত ২টায়। এ দুই দফা অগ্নিকাণ্ডে গ্যাসক্ষেত্রের তিন বিসিক গ্যাস পুড়ে যায় এবং ৫ দশমিক ৮৯ থেকে কমপক্ষে ৫২ বিসিক গ্যাসের রিজার্ভ ধ্বংস হওয়াসহ আশপাশের টেংরাটিলা, আজবপুর, গিরিশনগর, কৈয়াজুরি, টেংরাবাজার ও শান্তিপুরের মানুষের ঘরবাড়ি, গাছ ও হাওরের ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।