দুই লঞ্চ দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে ৪৭ সুপারিশ
সুন্দরবনের শ্যালা নদী ও মানিকগঞ্জে পদ্মা নদীতে দুটি নৌযান ডুবে যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে কমিটি। আজ রোববার দাখিল করা প্রতিবেদন দুটিতে ওই দুই ঘটনায় মোট ৪৭টি সুপারিশ করা হয়েছে।
গত বছর ৯ ডিসেম্বর ভোরে বাগেরহাট জেলার সুন্দরবনসংলগ্ন মৃগমারী এলাকার শ্যালা নদীতে তেলবাহী নৌযান ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ এবং গত ২২ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া ঘাটের কাছে পদ্মা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি মোস্তফা ডুবে যাওয়ার ঘটনায় আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে নৌ মন্ত্রণালয়। আজ জমা দেওয়া প্রতিবেদনে ওটি সাউদার্ন দুর্ঘটনার বিষয়ে কমিটি ২৩টি এবং এমভি মোস্তফা দুর্ঘটনার বিষয়ে কমিটি ২৪টি সুপারিশ করেছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম খানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়ে আরো বলা হয়েছে যে, তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (টাস্কফোর্স) নূর-উর-রহমান আজ নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিক আলম মেহেদীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ওটি সাউদার্ন-৭ দুর্ঘটনার বিষয়ে ২৩টি সুপারিশের মধ্যে আইনগত সুপারিশ রয়েছে দুটি, নৌ নিরাপত্তাসংক্রান্ত সুপারিশ তিনটি, প্রশাসনিক ব্যবস্থাসংক্রান্ত সুপারিশ ১১টি, সার্ভে-সংক্রান্ত সুপারিশ ছয়টি এবং অন্যান্য সুপারিশ একটি।
এমভি মোস্তফার দুর্ঘটনার বিষয়ে ২৪টি সুপারিশের মধ্যে আইনগত সুপারিশ একটি, নৌ নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সুপারিশ ছয়টি, প্রশাসনিক ব্যবস্থাসংক্রান্ত সুপারিশ নয়টি, সার্ভে-সংক্রান্ত সুপারিশ পাঁচটি এবং অন্যান্য সুপারিশ রয়েছে তিনটি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখবে। পরবর্তী সময়ে এসব সুপারিশ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ও মিডিয়ায় প্রকাশ করা হবে বলে ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় অন্যান্যের মধ্যে তদন্ত কমিটির সদস্য সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন কে এম জসীম উদ্দিন সরকার, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মাঈন উদ্দিন হাসান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এহতেশামুল হক খান, বিআইডব্লিউটিসির চিফ ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রহিম তালুকদার, বুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাদা তরফদার এবং মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাজিবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের মাঝামাঝি মৃগমারী এলাকার শ্যালা নদীতে নোঙর করা অবস্থায় ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামের একটি তেলবাহী নৌযানের সাথে এম টি টোটাল নামের একটি নৌযানের সংঘর্ষ হয়। এতে ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ ডুবে যায়।
এ ঘটনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থার প্রতিনিধিসহ জাতীয় ও অন্তর্জাতিক পর্যায়ের পরিবেশবিদরা সুন্দরবনের সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন।
এ ছাড়া গত ২২ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া ঘাটে পদ্মা নদীতে যাত্রীবাহী নৌযান এমভি মোস্তফার সাথে সারবোঝাই আরেকটি মালবাহী নৌযান এম নার্গিস-১-এর সংঘর্ষ হয়। এতে এমভি মোস্তফা ডুবে গেলে নিহত হন এর ৭০ যাত্রী।