প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম করে দেওয়া হবে : শেখ হাসিনা

Looks like you've blocked notifications!
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টির জন্য সরকার দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দুটি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১৫-এর ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা প্রতি উপজেলায় অন্তত একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করে দেব। যেখানে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরাই বেশি করে খেলাধুলার সুযোগ পাবে।’ তিনি বলেন, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সংস্কৃতি চর্চায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ব্যস্ত রাখা গেলে তারা আর বিপথে যাবে না।’ তিনি দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা যাতে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার সুযোগ পায়, সেদিকে লক্ষ রাখার জন্য শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানান।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ দুটি টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবলের ফাইনালে ময়মনসিংহের কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩-১ গোলে রাজশাহীর খর্দ্দকৌড় প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পরাজিত করে তৃতীয়বারের মতো এই শিরোপা জয় করে। প্রধানমন্ত্রী প্রমীলা ফুটবলের আকর্ষণীয় এই ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করেন।

এর আগে দুপুরে অনুষ্ঠিত হয় ছেলেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা। এতে কক্সবাজার জেলার পেকুয়ার রাজখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দিনাজপুরের বীরগঞ্জের মরিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে পরাজিত করে শিরোপা জয় করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে লক্ষাধিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১০ লাখের অধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ের এ দুটি টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ ও তৃতীয় স্থান অধিকারী দল, দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ট্রফি এবং ব্যক্তিগত পুরস্কার বিতরণ করেন।

চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি ছাড়া এক লাখ টাকার প্রাইজমানি এবং প্রতি খেলোয়াড়কে ১০ হাজার টাকার চেক ও মেডেল, রানার্সআপ দলকে ৭৫ হাজার টাকার প্রাইজমানি ও ট্রফি এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী দলকে ৫০ হাজার টাকার প্রাইজমানি দেওয়া হয়।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ময়মনসিংহের কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শামসুন্নাহারকে সেরা খেলোয়াড় এবং সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে একই বিদ্যালয়ের রোজিনা আক্তারকে গোল্ডেন বুট, গোল্ডেন বলসহ ২৫ হাজার টাকার পৃথক প্রাইজমানির চেক দেওয়া হয়।

আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন কক্সবাজার জেলার পেকুয়ার রাজখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আবিদ হাসান সেরা খেলোয়াড় এবং বীরগঞ্জের মরিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাব্বী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনসহ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সচিব, বিভিন্ন দপ্তর ও অধিদপ্তরের প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের জন্য ফাইনালের দুটি দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এরা চমৎকার নৈপুণ্য দেখিয়েছে। মনে হয়, বড়দেরও হার মানিয়ে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই যে খেলাধুলা শুরু হলো এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে। তারা খেলাধুলায় বর্তমানে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ভালো করছে। আগামীতে তারা দেশের জন্য আরো সুনাম বয়ে আনতে সক্ষম হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ৬৩ হাজার ৫০৯টি দল এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল-২০১৫ তে ৬৩ হাজার ৪৩১ দল অংশগ্রহণ করেছে। বিশ্বের আর কোথাও এত বৃহৎ আয়োজনে ফুটবল টুর্নামেন্ট হয় কি না, তা আমার জানা নেই।’ তিনি বলেন, ‘স্টেডিয়ামে বসে চিনাবাদাম খেতে খেতে খেলা দেখার মজাটাই আলাদা।’

জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ তিনি চিনাবাদাম খেতে খেতেই উপভোগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, স্টেডিয়ামে আসার পূর্বেও তিনি টিভি সেটে খেলা দেখছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলার মধ্যে থাকলে আগামীতে একটি সুন্দর প্রজন্ম গড়ে উঠবে, যেখানে আর জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের কোনো স্থান থাকবে না। খেলাধুলার মাধ্যমে মেধার সর্বোচ্চ বিকাশ সাধন করে সোনার বাংলা গড়ার জন্য এই সোনার ছেলেমেয়েরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালে মাতৃভাষার জন্য যে লড়াই শুরু হয়, তাই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সালাম, বরকতদের রক্তে স্নাত হয়ে একাত্তরে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা সব সময় মনে রাখবে আমরা বিজয়ী জাতি। চাইলে আমরা সবকিছুই করতে পারি।’