আসামি ইকবালের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় তিন শিশুকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আসামি ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক এ অভিযোগপত্র দেন। আজ বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট আদালতে তা উপস্থাপনা করা হয়।
এসআই এমদাদুল হক জানান, অভিযোগপত্রে প্রবাস থেকে পাঠানো টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শৈলকুপা থানার অভিযোগপত্র নম্বর ৩৫। এ মামলায় একমাত্র আসামি নিহত তিন শিশুর চাচা মো. ইকবাল হোসেনের (৪০) বিরুদ্ধে প্যানাল কোর্টে ৩০২ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ৩ জানুয়ারি রাতে উপজেলা শহরের কবিরপুরে স্কুলছাত্র দুই সহোদর মোস্তফা সাফিন (১০) ও মোস্তফা আমীন (৮) এবং তাদের ফুফাতো ভাই মাহীনকে (১৩) ঘরে বন্ধ করে গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় ।
ঘটনার দিন পুলিশ নিহতদের ছোট চাচা মো. ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। এ হত্যাকাণ্ডের পরের দিন ৪ জানুয়ারি সাফিন ও আমীনের বাবা মো. দেলোয়ার হোসেন শৈলকুপা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ৫ জানুয়ারি একমাত্র আসামি ইকবাল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট মেরিন টেকনোলজি নারয়ণগঞ্জ থেকে ২০০৬ সালে ডিপ্লোমা পাস করেন তিন শিশুর ঘাতক ইকবাল হোসেন (৪২)। এর আগে তিনি শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ডিপ্লোমা পাস করেই তিনি সিঙ্গাপুরে চাকরি নিয়ে চলে যান। দেশে ফিরে আসেন গত বছরের আগস্ট মাসের দিকে। সার ব্যবসায়ী গোলাম নবির দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে ইকবাল। তিনি গত আট বছরে শৈলকুপা অগ্রণী ব্যাংকে বাবার অ্যাকাউন্টে মোট ৩৯ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন। দেশে ফিরে সেই টাকা নিয়ে বাবা ও ভাই দেলোয়ারের সঙ্গে বিরোধ বাধে তাঁর। দেলোয়ার শিক্ষকতা করেন শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কারিগরী শাখায়। বোন জেসমিনও শিক্ষকতা করেন। তাঁর স্বামী রাশেদ কীটনাশক ওষুধের ব্যবসা করেন। মাহীন তাঁদের একমাত্র ছেলে।
পুলিশ ও নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সময় চাচা ইকবাল তাঁর নিজের বাড়িতে সাফিন ও আমীনকে ডেকে নেন। এর আগে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ঢাকাতে পাঠিয়ে দেন তিনি। ঘরে ঢুকতেই দুই ভাইয়ের মুখ বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে ইকবাল। রক্তে ভেসে যায় মেঝে। জানালা দিয়ে উকি দিয়ে ঘটনা দেখে ফেলে ভাগ্নে মাহীন। তাকেও ঘরে ঢুকিয়ে নেন। এরপর রান্না ঘর থেকে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে আসেন এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। তারপর গেটে ও ঘরে তালা দিয়ে ছাদে উঠে যান তিনি। দাউ দাউ করে আগুনে পুড়তে থাকে তিন শিশু। ধোঁয়া দেখে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। খবর দেওয়া হয় শৈলকুপা ফায়ার স্টেশনে। খবর পেয়ে পুলিশও আসে। এরপর তালা ভেঙে উদ্ধার করা হয় অগ্নিদগ্ধ তিন শিশুকে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে দুই সহোদরের মৃত্যু হয়। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত ৮টার দিকে মারা যায় মাহীন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকাবাসী বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। স্কুলের শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা খুনি ইকবালের ফাঁসির দাবি করেন।