বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন হবিগঞ্জের ৪ শিশুর মা

Looks like you've blocked notifications!
সুন্দ্রাটিকি গ্রামে নিহত শিশুদের মা ও স্বজনদের চিকিৎসা চলছে। সঙ্গে রয়েছেন স্থানীয় এমপি কেয়া চৌধুরী। ছবি : এনটিভি

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামে নিহত চার শিশুর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। বিলাপ করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন শিশুদের মা-বাবা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহ ধরে একরকম নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন ওই চার শিশুর মা। তাঁদের সেবা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছেন স্বজনরা। কিন্তু এর পরও থামছে না কান্না।

এমন পরিস্থিতিতে দুদিন ধরে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক বাবুল কুমার দাসের নেতৃত্বে একটি দল বাড়িতে গিয়ে ওই মায়েদের জরুরি চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।

আজ শুক্রবারও নিহত শিশুদের বাড়িতে পাড়া-পড়শি, আত্মীয়স্বজন, গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভিড় দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পরপর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আত্মীয়স্বজন নিহতদের পরিবার-পরিজনকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেরাই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।

হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) অ্যাডভোকেট কেয়া চৌধুরী বলেন, ‘নিহত চার শিশুর বাবা-মা গত কয়েক দিন ধরে অনাহারে থেকে প্রায় অসুস্থ। বাড়ির বাচ্চাদের শরীরে বেশ জ্বর। নারীরা কান্নাকাটি করে বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। বয়স্ক ব্যক্তিদের বুকে ব্যথা শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় আমি অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে নিহত পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলাম।’

‘বাহুবল উপজেলা হাসপাতাল থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে ডাক্তার-নার্স ও পর্যাপ্ত ওষুধ আনিয়ে নিহত শিশুদের বাড়িতে চিকিৎসার অস্থায়ী স্বাস্থ্যক্যাম্প করে দিয়েছি। যতক্ষণ পর্যন্ত এ পরিবারের সদস্যরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ না হবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা অব্যাহত থাকবে’, যোগ করেন কেয়া।

গত শুক্রবার বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার চাচা আবদুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০), আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭) এবং প্রতিবেশী আবদুল কাদিরের ছেলে ইসমাঈল হোসেন (১০) নিখোঁজ হয়। ওই দিন বিকেল বেলা তারা উত্তর ভাদেশ্বর গ্রামে ফুটবল খেলা দেখতে গিয়েছিল।

এ ব্যাপারে পরদিন শনিবার ওয়াহিদ মিয়া বাদী হয়ে বাহুবল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এর পরে মঙ্গলবার রাতে বাহুবল মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন নিখোঁজ এক শিশুর পিতা।

এ ঘটনার পর পুলিশের একাধিক দল ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মাঠে নামে ওই শিশুদের অনুসন্ধান চালায়। বুধবার সকালে সুন্দ্রাটিকি গ্রামের দিনমজুর কাজল মিয়া প্রতিদিনের মতো বাড়ি থেকে বের হয়ে করাঙ্গী নদীর পাশে মাটি কাটতে গিয়ে মাটিচাপা অবস্থায় চার শিশুর লাশ দেখতে পান। পরে লাশগুলো উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিন রাতে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ছয়জন আটকের খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের মধ্যে আবদুল আলী বাগাল ও তার ছেলে জুয়েল মিয়াকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা হবিগঞ্জের মুখ্য বিচারিক হাকিম কাউসার আলমের আদালতে হাজির করেন। এ সময় তাদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে বিজ্ঞ আদালত ১০ দিনই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আটক অন্যরা হলেন আবদুল আলী বাগালের আরেক ছেলে রুবেল মিয়া, একই গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান আরজু ও আবদুর রহমানের ছেলে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক বশির মিয়া ও বাচ্চু মিয়া।