মঠের অধ্যক্ষ হত্যা : পুলিশের তদারকি কমিটি

Looks like you've blocked notifications!
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় ওরফে যগেশ্বর দাসাধিকারী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আজ উপজেলা সদরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে সর্বস্তরের মানুষ। ছবি : এনটিভি

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় ওরফে যগেশ্বর দাসাধিকারী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদারকির জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, আট সদস্যের এ কমিটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার দেখভাল করবে। তদারক কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীন মোহাম্মদকে।

দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরের করতোয়া নদীর পাশে শ্রীশ্রী সন্তগৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল রোববার তাঁর বড় ভাই রবীন্দ্র চন্দ্র রায় বাদী হয়ে অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে বিস্ফোরক নিয়ন্ত্রণ আইনে দেবীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মজিবর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকৃতরা হলেন খলিলুর রহমান (৪৫), বাবুল হোসেন (৪০) ও জাহাঙ্গীর আলম (২৫)। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গতকাল রোববার রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাঁদের আটক করে।

পুলিশ জানিয়েছে, এঁদের মধ্যে খলিলুর ও বাবুল ২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলা মামলার আসামি ছিলেন। পরে খলিলুর মামলা থেকে অব্যাহতি পান। এ দুজন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সঙ্গে জড়িত। আর জাহাঙ্গীর ছাত্রশিবিরের নেতা এবং সন্ত্রাস ও নাশকতা মামলার আসামি।

দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আকতার এনটিভি অনলাইনকে জানান, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরে রিমান্ডের আবেদন চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।

জেলা পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। ছবি ভিডিও দেওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

এলাকাবাসীর মানববন্ধন

আজ সকালে দেবীগঞ্জ উপজেলাবাসীর ব্যানারে উপজেলা সদরের বিজয় চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপজেলার হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ক্ষত্রীয় পরিষদ, আওয়ামী লীগ, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, বৃহত্তর দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন সাধু সন্ন্যাসী, স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়।

অন্যদিকে ‘জাগো হিন্দু পরিষদ’ পঞ্চগড় জেলা শাখা মঠের অধ্যক্ষ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।

একটি মিছিল উপজেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌরাস্তায় সমাবেশ করে। সমাবেশে ‘জাগো হিন্দু পরিষদ’ জেলা শাখার সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়, সাধারণ সম্পাদক দেবনারায়ণ, নির্মল চন্দ্র রায়, নারায়ণ চন্দ্র রায়, মহাদেব রায় প্রমুখ বক্তব্য দেন।  

সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম নুরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ও দেবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাসনাত জামান চৌধুরী জজ, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু তোরাব সরকার, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতা সুবাস চন্দ্র রায়, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার স্বদেশ চন্দ্র রায়, গোড়াচাঁদ অধিকারী, পরিমল দে সরকার, বিপেন চন্দ্র রায়, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মালেক চিশতী, জাসদ নেতা এমরান আল আমীন, নিহতের বড় ভাই রবীন্দ্র নাথ রায়, ভাতিজা বিনয় কুমার রায় প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বক্তারা অবিলম্বে পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

রোববার সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরের করতোয়ার পাশে শ্রীশ্রী সন্তগৌড়ীয় মঠের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলা কেটে হত্যা করে তিন দুষ্কৃতকারী। এ সময় গোপাল চন্দ্র রায় নামে এক পূজারি গুলিবিদ্ধ হন। নির্মল চন্দ্র ওরফে নিতাই চন্দ্র ও গোপালের মা চিরতা রানী আহত হন।