এমপির মুখে ধুলা, আ. লীগের হাতাহাতি

সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের ওপর দুই দফায় ধুলা নিক্ষেপ করেছেন দলটির কর্মীরা। এ সময় দুই পক্ষের হাতাহাতিতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এ ছাড়া দলে সাধারণ সম্পাদকের পদ না পেয়ে চেয়ার ভাঙচুর ও ব্যানার ছিড়ে ফেলেছেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুটের নেতাকর্মীরা।
আজ বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সমাবেশ শুরুর আগে আজ বেলা আড়াইটার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক সম্মেলনস্থলে পৌঁছালে কয়েকজন ব্যক্তি তাঁর মুখে ধুলা নিক্ষেপ করে। এ সময় পুরো মাঠে উত্তেজনা দেখা দেয়। দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। পুলিশ এসে লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য ও নেতাকর্মীরা মানিককে নিরাপদে সম্মেলনের মঞ্চের দিকে নেওয়ার সময় হঠাৎ করে এক ব্যক্তি এমপি মানিকের চোখে এক মুঠ ধুলা নিক্ষেপ করে।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ দুপুরে আমি, সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য বেগম শামছুন নাহার বেগম ও জেলা পরিষদের প্রশাসক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন সম্মেলনের মাঠে ঢুকতে গেলে মুকুটের লোকজন বাধা দেয়। ধুলা দেওয়ার ঘটনায় আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে আমি কখনো ভাবিনি। চোখে ধুলা ঢোকায় এখনো অসুস্থবোধ করছি। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি।’এদিকে ধুলা হামলার কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ অতিথিরা এলে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন শুরু হয়।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সভাপতি পদে সাবেক সংসদ সদস্য মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা পরিষদের প্রশাসক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনের নাম ঘোষণা করেন।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট ও তাঁর নেতাকর্মীরা ভেবেছিলেন মুকুটই জেলা আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন। মুকুটের নাম ঘোষণা না করায় সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সমর্থকরা না না বলে তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁরা সম্মেলন শেষে এলোপাতাড়ি চেয়ার ভাঙচুর করেন এবং ব্যানার ছিড়তে ছিড়তে সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘তিন বছর পর পর সম্মেলন করার কথা, কিন্তু সুনামগঞ্জে হচ্ছে ১৭ বছর পর। এই ১৭ বছরে চার বার সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। চারবার সম্মেলন হলে চারজন সভাপতি ও সম্পাদক হতো। সময় মতো সম্মেলন হলে দলও শক্তিশালী হয়। নতুন নেতৃত্ব বের হওয়ার সুযোগ তৈরি হতো।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দলের এবং সরকারের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। সুনামগঞ্জ জেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মতো অনেক নেতা রয়েছেন। কে নেতৃত্ব দেবে, কার কী যোগ্যতা এসব বিষয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নিজেই খোঁজ খবর নেন, সভানেত্রী ব্যক্তিগত সূত্র থেকেও যাচাই-বাছাই করেন, সম্মেলনের আগের দিন আমাকে দুটি নাম তুলে দিয়ে বলেন, তুমি আমার পক্ষ থেকে সম্মেলনে প্রস্তাব করবে। আমি সভানেত্রীর দেওয়া দুটি নাম উত্থাপন করলে আপনারা নিশ্চয়ই খালি হাতে ফেরত দেবেন না।’
এরপর সৈয়দ আশরাফ সভাপতি পদে মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে এনামুল কবির ইমনের নাম ঘোষণা করেন।
সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘খালেদা জিয়া এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন বলেই তাকে এখন কারাগারে যাওয়ার প্রহর গুনতে হচ্ছে। আর তারেক রহমান হাওয়া ভবনের দুর্নীতির টাকায় লন্ডনে বসে সেই টাকা উড়াচ্ছেন।’দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারেক রহমান এখন কোনো কথা বললেও তা আর কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয় না।’
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুটের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে আজিজুস সামাদ ডন প্রমুখ।