ব্যবহারের আগেই ফাটল

তিন বছরেও শেষ হয়নি ১৫ মিটার সেতুর কাজ

Looks like you've blocked notifications!
দীর্ঘ তিন বছর কাজ চলার পরও নওগাঁর শ্রীমতখালী সেতুর নির্মাণকাজের এটুকুই দৃশ্যমান হয়েছে। ছবি : এনটিভি

সেতুর দৈর্ঘ্য মাত্র ১৫ মিটার। তিন বছর আগে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এতদিনেও এ স্বল্পদৈর্ঘ্যের সেতুর কাজ শেষ হয়নি। স্থানীয়রা ভেবেছিলেন, এই সেতু নির্মাণ হলে তাঁদের যাতায়াতের দুর্ভোগ কমবে। কিন্তু উল্টো দুর্ভোগ বেড়েছে।

নওগাঁর রানীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের হামিদপুর এলাকার শ্রীমতখালী খালের ওপর এই সেতুর নির্মাণকাজ চলছে তিন বছর ধরে।

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) রানীনগর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২০১২-১৩  অর্থবছরে উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) ও স্থানীয় সরকার সহায়তা প্রকল্পের (এলজিএসপি) যৌথ অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১২ সালের নভেম্বরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম ব্রিজটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পরই ১৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।

সেতু নির্মাণের কাজ পায় জাকিয়া বিল্ডার্স ও সিদ্ধার্থ কুমার বিল্ডার্স। গত বছর, অর্থাৎ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে এসে সেতুটির দুটি স্প্যান ও ওপরের বেসমেন্ট বা পাটাতন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। কিন্তু জনসাধারণের চলাচল শুরুর জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার আগেই বেসমেন্টে ফাটল দেখা দেয়।

বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বেসমেন্টটিকে আরো শক্তিশালী করার নির্দেশ দেয় এলজিইডি। ফলে একবার কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখন আবারও সেই বেসমেন্টে পুনঃসংস্কারের কাজ চলছে। 

সরেজমিনে শ্রীমতখালী খালের ওপর নির্মিত সেতুটিতে গিয়ে দেখা যায়, বেসমেন্টটিকে শক্তিশালী করতে ফাটল দেখা দেওয়া অংশে কোনোমতো ইট-সিমেন্ট লাগিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করা হয়েছে। বেসমেন্টের নিচে ইট-সিমেন্ট লাগানো অংশে খুঁটি দেওয়া রয়েছে। বিকল্প কোনো উপায় না থাকায় এবং সেতুর দুই অংশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় স্থানীয় লোকজন ব্রিজের সঙ্গে বাঁশের চাটাই লাগিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন। আর ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য খালে ইট-বালু বিছিয়ে রাস্তা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়নের মিরাট গ্রামের বাসিন্দা মাহতাব হোসেন, শাহীন ও মহীর উদ্দিন বলেন, রানীনগরের মিরাট, আত্রাইয়ের হাটকালুপাড়া ও কালকাপুর, মান্দার কশব ও বিষ্ণুপুর এবং নওগাঁ সদরের শিকারপুর ইউনিয়নের ২০-২৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন এই পথ দিয়ে যাতায়াত করেন। সেতুটির নির্মাণ শেষ হলে এলাকার কৃষিপণ্য পরিবহন ও এলাকাবাসীর যাতায়াতে ব্যাপক সুবিধা হবে।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর এলাকার মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু সেতু নির্মাণের এত দীর্ঘসূত্রতার কারণে এলাকার লোকজনের সুবিধা হওয়া দূরের কথা, উল্টো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া সেতুর কাজও অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। চলাচল শুরু হওয়ার আগেই যে ব্রিজে ফাটল দেখা দিয়েছে, তাতে এই ব্রিজ কত দিন টিকবে, এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

জানতে চাইলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জাকিয়া বিল্ডার্সের মালিক ময়নুল ইসলাম ভুট্টো বলেন, ‘সময়মতো বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে কাজ করতে দেরি হচ্ছে। তবে আগামী জুন-জুলাইয়ের আগে কাজ শেষ হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

এক প্রশ্নের জবাবে ময়নুল ইসলাম সেতুর কাজ নিম্নমানের হয়নি বলে দাবি করেন। ফাটল দেখা যাওয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমাকে যেভাবে বলা হয়েছিল, সেভাবেই কাজ করেছি। তবে উপজেলা প্রকৌশলীর নির্দেশে বেসমেন্টটা আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল আজম জানান, কাজটি এডিবি ও এলজিএসপির দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে হওয়ায় ধাপে ধাপে বরাদ্দ আসছে। এ জন্য কাজটি শেষ করতে সময় লাগছে। সেতুর মূল কাজ মোটামুটি শেষ, এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণ হলেই সেতুটি চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী হবে।

ব্রিজের মানসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী বলেন, ‘সেতুর কাজ একটু নিম্নমানের হয়েছিল। তবে সেই ঘাটতি পূরণের জন্য সেতুর ভিত্তি এবং বেসমেন্টকে শক্তিশালী করার কাজ চলছে।’