ব্যস্ত রাস্তা বন্ধ করে রাজশাহীতে যুবলীগের সম্মেলন

Looks like you've blocked notifications!
রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সম্মেলন ঘিরে নগরীর আলুপট্টি রাস্তা দখল করে এভাবে মঞ্চ তৈরি করা হয়। ছবি : এনটিভি

‘অফিসে ঢুকতে গিয়ে অহেতুক ঘুরপথে আসতে হলো। আলুপট্টির মোড়ের চার লেনের প্রধান রাস্তাটি পুরোপুরি বন্ধ করে যুবলীগের সম্মেলন চলছে। ফলে উৎসব হলের মোড় থেকে বাইপাস গলি সম্বল। গলিতে রিকশা-ভ্যান-অটোরিকশা-গাড়ি একাকার। এরই মাঝে গলির দুই পাশে জটলা। মাথায় হলুদ পট্টি বাঁধা, বুকে সম্মেলনের ব্যাচ আঁটা সব কিশোর-তরুণের দল বিড়ি ফুঁকছে। নিশ্চিত বাইরে থেকে আসা। মাথায় ঢোকে না, রাজশাহী শহরে এত এত মাঠ থাকতে রাস্তা বন্ধ করে সম্মেলনের যৌক্তিকতা কী?’

শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সম্মেলন ঘিরে নগরীর আলুপট্টি রাস্তা দখল করে মঞ্চ তৈরি করা এবং রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যান চলাচল ব্যাহত করার কারণে দুর্ভোগের শিকার হয়ে রাজশাহীর সিনিয়র সাংবাদিক শিবলী নোমান এ মন্তব্য করেছেন তাঁর ফেসবুক পেজে। শুধু তিনি নন, তাঁর মতো হাজার হাজার মানুষ গত দুদিন থেকে ওই এলাকা দিয়ে পথ চলতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কিন্তু প্রশাসনের চোখে পড়েনি বিষয়টি। কারণ তারাই যুবলীগের কাউন্সিলের নামে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে।

প্রায় ২৮ ঘণ্টা নগরবাসীকে জিম্মি রেখে শনিবার রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হয়েছে নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ত রাস্তা আলুপট্টি-সাহেববাজার সড়কে। বিকেল ৪টার দিকে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী।

স্কুল-কলেজের মাঠ বা মিলনায়তনে না করে মূল শহরের মধ্যে আলুপট্টিতে ব্যস্ত সড়কের ওপর মঞ্চ তৈরি করে উদ্বোধনী সভায় করা হয়। দীর্ঘ ১২ বছর পর শনিবারের এই সম্মেলনকে ঘিরে শুক্রবার বিকেল থেকে রাজশাহী নগরের সাহেববাজার-আলুপট্টি সড়ক বন্ধ করে দিয়ে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করা হয়। ফলে শুক্রবার বিকেল থেকেই নগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

সাংবাদিক শিবলী নোমান তাঁর ফেসবুক পেজে আরো লিখেছেন, ‘বিশেষ করে যেখানে মূল দলের (মহানগর আওয়ামী লীগের) সম্মেলনও হয়েছে মেডিকেল কলেজের অডিটরিয়ামে? বাঁশের চেয়ে কঞ্চি কি বড় হয়ে গেল? প্রশাসনই বা অনুমতি দিল কীভাবে? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, রাস্তা বেঁধে যুবলীগের এই সম্মেলন থেকে আওয়ামী লীগের অর্জনটা কী? মানুষের বিরক্তি? যখন বিএনপি-জামাতের পেট্রল বোমা-আগুন-ককটেল-ভাঙচুরে পুরো রাস্তায় মৃত্যুর নিঃস্তব্ধতা বিরাজ করত, তখন সেই শূন্য রাস্তায় এদের দেখা যায়নি কেন? এই হলুদ পট্টিওয়ালা বিড়িখোরের দল তখন কই ছিল, কে জানে! এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কেউ আছে কি না জানি না। তবে রাস্তা বন্ধ করে এসব কর্মসূচির অনাকাঙ্ক্ষিত বিড়ম্বনা যাঁরা ডেকে আনেন, আখেরে তাঁরা নিজের এবং দলের ক্ষতি ডেকে আনেন। সুতরাং যাঁদের ভাবার তাঁরা দয়া করে ভাবুন।’

জানা গেছে, এর আগে ২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল মহানগর যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ ১২ বছর পর শনিবার রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এ জন্য শুক্রবার বিকেলেই আলুপট্টি-সাহেববাজার সড়ক বন্ধ করে দিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হয়। ফলে এ রুটের যানবাহন চলাচল গেল দুদিন ধরে বন্ধ ছিল। বিকল্প সড়কে চলতে গিয়ে গোটা নগরীতেই ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আলুপট্টির পাশেই বোয়ালিয়া মডেল থানার সামনে দিয়ে সব যানবাহন ঢুকে পড়ে। তখন ওই এলাকায় পথচারী পারাপার কঠিন হয়ে পড়ে। সরু এই সড়কে ঢুকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দোতলা বাস আটকা পড়ে। বাসটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজশাহীতে শিক্ষাসফরে এসেছিল। সেখানে আটকা পড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও।

ওই গাড়ির চালক বলেন, এ রাস্তা ছাড়া পার হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এখানে ঢুকেই বিপদ হয়েছে। এখন আর পেছনের দিকেও যেতে পারছেন না, সামনেও এগোতে পারছেন না। এ ছাড়া, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এই যানজট আরো বাড়িয়ে দেয়। দুই দিক থেকেই অটোরিকশা ঢুকে রাস্তার ভেতরে আটকে পড়ে। তাতে মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়।

এদিকে শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠান শুরু হলেও সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশ অবস্থান নিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে। যুবলীগের সম্মেলনস্থল থেকে অন্তত দুই কিলোমিটার দূরে সিঅ্যান্ডবি মোড়েই ব্যারিকেড দেওয়া হয়। একই দূরত্বের তালাইমারী মোড় এলাকাতে পুলিশ অবস্থান নেয়।

এ ছাড়া শনিবার সারা দিনই বন্ধ ছিল আলুপট্টিতে সমাবেশস্থলের পাশের মার্কেট। সাহেববাজারেও লোকজন যেতে না পারায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাটা পড়ে।

একাধিক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুক্রবার ছিল তাঁদের সাপ্তাহিক ছুটি। আর শনিবার যুবলীগের সম্মেলনের কারণে ক্রেতারা বাজারে আসতে পারেনি। এ কারণে কেনাবেচা হয়নি বললেই চলে। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউই মুখ খুলতে চাননি।

মূল সড়কের ওপর সম্মেলনের জায়গা নেওয়ার ব্যাপারে মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী বলেন, নেতাদের পছন্দ ছিল শিরোইল হাইস্কুল মাঠ। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার কারণে সেখানে করা যায়নি। তাই আলুপট্টি মোড় ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এ জন্য মানুষের একটু দুর্ভোগ হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম বাদশা বলেন, যুবলীগের পক্ষ থেকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে সম্মেলনের এই জায়গা ব্যবহারের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। সিটি করপোরেশন অনুমতি দিয়েছে। তারপর পুলিশ অনুমতি দিয়েছে।