হবিগঞ্জে চিকিৎসক ও ব্রাদার লাঞ্ছিত

দুই ঘণ্টা সেবা বন্ধ রেখে প্রতিবাদ, দুর্ভোগে রোগীরা

Looks like you've blocked notifications!

হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে গতকাল সোমবার রাতে দুই ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীনের নিরাপত্তারক্ষীর হাতে হাসপাতালটির কর্তব্যরত চিকিৎসক ও ব্রাদার লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে এ ঘটনা ঘটে।

গতকাল রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখে সে সময় প্রতিবাদ সভা করেন হাসপাতালটির চিকিৎসক, নার্স ও ব্রাদাররা। এই পুরো সময় কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েন রোগীরা। পরে সিভিল সার্জনের নির্দেশে রাত ১২টার পর হাসপাতালটির পরিবেশ স্বাভাবিক হয়।

দোষীদের বিচারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার সকালে আবারও হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীরা বিক্ষোভ করতে জড়ো হলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অনুরোধে তাঁদের কর্মসূচি একদিন পিছিয়ে দেন। আগামীকাল বুধবার আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তাঁরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত ৯টার দিকে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীন। হাসপাতালে পরিচ্ছন্ন কোনো কক্ষ না থাকায় তাঁকে পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কক্ষ গুছিয়ে দিতে বিলম্ব হওয়ায় জেলা জজ আদালতের নাজির রেজাউল করিম খোকন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মঈনকে গালিগালাজ করেন। মাফরোজা পারভীনকে নির্ধারিত কক্ষে নেওয়ার পর তাঁর দেহরক্ষী পুলিশ কনস্টেবল নূরে আলম রনি কক্ষ দিতে বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি নিয়ে উত্তেজিত হয়ে জরুরি বিভাগে কর্মরত ব্রাদার (নার্স) হাবিবুর রহমানকে জোরপূর্বক সদর মডেল থানায় নিয়ে যান এবং রাস্তায় তাঁকে মারধর করেন।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালের সব চিকিৎসক ও কর্মচারী সেবা প্রদান বন্ধ করে দেন। তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. অরুণ কুমার পালকে জানান। তিনি সিভিল সার্জন, পুলিশসহ জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানান। পরে সব চিকিৎসক ও কর্মচারী জরুরি বৈঠকে বসেন।

বৈঠকে সিভিল সার্জন ডা. দেবপদ রায়, হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. অরুণ কুমার পালসহ সব চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ অংশ নেন। খবর পেয়ে সভায় উপস্থিত হন সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান মনির ও হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন।

এ সময় ব্রাদার হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ কনস্টেবল নূরে আলম রনি ও নাজির রেজাউল করিম তাঁকে অহেতুক লাঞ্ছিত করেছেন। এতে তাঁর বিন্দুমাত্র দোষ ছিল না। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের স্টাফদের ইনচার্জ মোশারফফ হোসেন আখনজী বলেন, অবিলম্বে এ ঘটনার বিচার না হলে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখবেন তাঁরা।

ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. অরুণ কুমার রায় বলেন, ‘অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীন অসুস্থ। এ সংবাদ আমাদের জানালে আমরা তাৎক্ষণিক হাসপাতাল থেকে দুজন চিকিৎসক পাঠাই। তাঁরা গিয়ে মাফরোজা পারভীনের চিকিৎসা করে আসেন। হাসপাতালের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ত্রুটি ছিল না। তার পরও হাসপাতালের চিকিৎসক ও ব্রাদারকে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে।’

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. দেবপদ রায় বলেন, ‘আমার চিকিৎসক ও স্টাফরা জরুরি বিভাগে কাজ করতে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন।’ একজন পুলিশের কনস্টেবল কার ইশারায় এ ধরনের কাজ করেছেন, তা জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান তিনি।

দীর্ঘ আলোচনার পর সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান মনির পুলিশ কনস্টেবল নূরে আলম রনির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

সভাশেষে সিভিল সার্জন ডা. দেবপদ রায় হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম পরবর্তী কর্মসূচি না ঘোষণা হওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দিলে কাজে ফিরে যান চিকিৎসক ও কর্মীরা।