প্রকাশ্য সভায় উপজেলা চেয়ারম্যানকে পেটাল প্রতিপক্ষ

Looks like you've blocked notifications!

দলীয় কোন্দলের জেরে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বাউফল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মজিবর রহমানকে প্রকাশ্যে পিটিয়েছেন প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। এর কিছুক্ষণ পরেই সভা পণ্ড হয়ে যায়। আহত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 

এ ব্যাপারে বাউফল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহামুদ জামান বলেন, ‘ঘটনা তেমন কিছুই নয়, মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় চেয়ারম্যানকে শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-সদর সার্কেল) মো. সাহেব আলী পাঠান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দলীয় কোন্দলের জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। 

উপজেলা চেয়ারম্যানের ওপর হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সভায় উপস্থিত পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক এ কে এম শামীমুল হক সিদ্দিকী। তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাউফলের বিভিন্ন এলাকায় সহিংস ঘটনা ও আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আশ্রাফ ফকির নিহত হওয়াসহ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিরসনে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সভা চলছিল। কতিপয় লোক উত্তেজিত হয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানান তিনি। 

কারা এ হামলা চালিয়েছে তাদের পরিচয় তিনি জানেন না বলে দাবি করেন জেলা প্রশাসক। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা দুপুর ১২টায় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সভা শুরু হয় বিকেল ৩টার পর। সভায় মুক্ত আলোচনার পর্বে আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলেয়া বেগম উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। 

সভায় উপস্থিত বাউফল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মজিবুর রহমান টেবিল চাপড়ে ওই বক্তব্যকে সমর্থন দেন। তারপরই ক্ষোভে ফুসে ওঠেন সভায় উপস্থিত অন্যরা। এর ফাঁকে সভাস্থল ত্যাগ করেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। পরে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে বাউফল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও নওমালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শাহজাদা হাওলাদারের ওপর হামলা চালানো হয়। এরপরই সভা পণ্ড হয়ে যায়। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহীম ফারুককে আটক করে একটি কক্ষে রাখা হয়। নেতাকর্মীদের তোপের মুখে কিছুক্ষণ পর তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। 

তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সুপার মো. মোসফিকুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি জানান, সভাকক্ষে একটু ঝামেলা হয়েছিল, তবে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন আহত হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

হামলায় আহত নওমালা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শাহজাদা হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, সভা চলাকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইব্রাহীম ফারুকের নেতৃত্বে কতিপয় নেতাকর্মী একত্রিত হয়ে প্রশাসনের উপস্থিতিতে সভাকক্ষে আকস্মিক হামলা চালিয়ে মারধর করে উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমানকে। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার চেয়ার ছুড়ে মারেন চেয়ারম্যান মজিবরকে লক্ষ্য করে। এতে গুরুত্বর আহত হন তিনি। এর প্রতিবাদ করলে আমাকে ও দাসপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরকে মারধর করা হয়।’

বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার জানান, ডিসি ও এসপির উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে ইব্রাহীম ফারুক বক্তব্য রাখছিলেন। এ নিয়ে সভায় উত্তেজিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কাউকে মারধর করা হয়নি। একটু ঝামেলা হয়েছে মাত্র। তবে আমার সঙ্গে কারো ঝামেলা হয়নি। যা শুনেছেন তা মিথ্যা, বানোয়াট।
গতকাল সোমবার রাতে আদাবাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর চাচাতো ভাই ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আশ্রাফ ফকিরকে কুপিয়ে ও রগ কেটে হত্যা করে দুর্বত্তরা। নিহতের পরিবারের দাবি, আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেনের সমর্থকরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করেছে।