চা নেই, ক্রিকেট আছে
এখন সময় ক্রিকেটের! উন্মাদনায় মেতেছে বাংলাদেশ। উত্তেজনায় ডুবেছে খেটে খাওয়া মানুষগুলোও। কারণ ভারত-বাংলাদেশ খেলা।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস আজ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটাই ব্যস্ততম কারওয়ান বাজার এলাকায় বেশির ভাগ চা দোকান বন্ধ। যেগুলো খোলা, সেখানেও নেই তেমন বেচা-বিক্রি। দোকানিদের জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘চা নেই, ক্রিকেট আছে।’
তিতাস গ্যাস ভবনের পেছনের গলিতে চা দোকানি মো. ইয়াসিন (২৩)। দোকানের বেচা-বিক্রি বন্ধ রেখে টিভিতে খেলা দেখছেন। সেখানে জড়ো হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। সবার মধ্যে তুমুল উত্তেজনা। ইয়াসিন বললেন, ‘আজ খেলার দিন। সবাই খেলা দেখতাছে। আমরাও খেলা দেখতাছি।’ কেমন বিক্রি হয়েছে - জানতে চাইলে (হেসে) তিনি বললেন, ‘অন্যদিন দুপুর পর্যন্ত দুই-তিন হাজার বিক্রি হয়। আজ বেঁচা হইছে ৪০০-৫০০ টাকার মতো। খেলা দেখতাছি, আনন্দ পাইতাছি।’ তাঁর চারটি দোকানই আজ বন্ধ।
একুশে টেলিভিশনের ভবনের পাশের গলির চা দোকানি তমিজ উদ্দিন (৪০)। তিনি বলেন, ‘দুপুর পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকার মতো। অন্যদিন এ সময়ে দুই হাজার টাকার বিক্রি হয়।’
পেট্রোবাংলার সামনে চা-বিস্কুট বিক্রি করেন মো. রুবেল (২৪)। বলেন, ‘আজ বিক্রি কম। অফিসাররা সব খেলা দেখে। অফিস থেকে বাইরে বের হয় না কেউ।’ রেডিও চালিয়ে খেলার ধারাভাষ্য শুনছিলেন রুবেল। খেলার খবর কী— জিজ্ঞেস করলে ক্রিকেট বিশ্লেষকের মতো বললেন, ‘ব্যাটে নেমেছে তামিম-কায়েস। ওপেনিং জুটির হিসাব করি না। তয় বাংলাদেশ জিতবেই।’
পেট্রোবাংলার অফিসের ঠিক সামনেই চার দোকান রয়েছে সুজন মিয়ার (৩৩)। বলেন, ‘রোজ বেচি তিন-চার হাজার টাকা। আজ এই পর্যন্ত বেচছি ১২০০ টাকা।’
সুজনের দোকানে চা খাচ্ছিলেন পেট্রোবাংলার কর্মচারী মো. হামিদুল ইসলাম। বলেন, ‘ধৈর্য ধরে খেললে বাংলাদেশ অবশ্যই জিতবে।’
চা দোকানে সাত-আট বছর বয়সী ভাগ্নে রাব্বিকে রেখে খেলা দেখতে গেছেন সুরুজ মিয়া। রাব্বি বসে বসে চা বানিয়ে খাচ্ছে। বলল, ‘মামা কতক্ষণ দুকানে থাকে, আবার খেলা দেখতি চলে যায়।’
কারওয়ান বাজারে বিএসইসি ভবনের ঠিক নিচে চা দোকানি মোহাম্মদ আলী (৫৫)। রেডিও চালিয়ে ক্রিকেট খেলার ধারাভাষ্য শুনছিলেন। বেচা-বিক্রিও করছিলেন। খেলা শুনছেন নাকি— জিজ্ঞেস করলে একটু উত্তেজিত হয়েই উল্টো প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক না? আপনি খেলা দ্যাখেন না।’ রাগত স্বরে বললেন ‘দুই উইকেট পড়ে গেছে। এহন জিগাইতাছেন খেলার খবর কী?’