শিক্ষক সংকটের কবলে নওগাঁর প্রাথমিক বিদ্যালয়

Looks like you've blocked notifications!

শিক্ষক সংকটের কারণে নওগাঁ জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিবছরই নতুন করে বাড়ছে এই শূন্যতা। অন্যদিকে প্রতিবছর যে পরিমাণ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় এই সংকট থেকে উত্তরণ পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তার ওপর প্রতিবছর অনেক শিক্ষক পিটিআই ট্রেনিং করতে ও মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাওয়ায় এ সংকট আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

একটি সূত্র জানায়, কোনো কোনো বিদ্যালয়ে দু-তিনজন শিক্ষক পাঠদান করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে বর্তমানে শহর থেকে শুরু করে মফস্বলের অনেক সচেতন অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের বিভিন্ন বেসরকারি (কেজি) বিদ্যালয়গুলোতে বেশি অর্থ খরচ করে পড়াশোনা করাতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনকি অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকও তাঁদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য পড়াশোনা করান বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জেলার ১১টি উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে ১১৯টি ও সহকারী শিক্ষক পদে ৫৩৩টি পদ শূন্য রয়েছে, যার সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।

দীর্ঘদিন ধরে জেলার আত্রাই উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ১০টি, ধামইরহাট উপজেলায় চারটি, নওগাঁ সদর উপজেলায় ১৪টি, নিয়ামতপুর উপজেলায় ১২টি, পত্নীতলা উপজেলায় ১১টি, পোরশায় পাঁচটি, বদলগাছীতে নয়টি, মহাদেবপুর উপজেলায় ১৮টি, মান্দা উপজেলায় ছয়টি, রানীনগরে ১৪টি ও সাপাহার উপজেলায় ছয়টি। বর্তমানে এই বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

অন্যদিকে জেলার আত্রাই উপজেলায় ১৯টি, ধামইরহাটে ২৪টি, নওগাঁ সদর উপজেলায় ২৩টি, নিয়ামতপুরে ৩৩টি, পত্নীতলায় ২৬টি, পোরশায় ৩১টি, বদলগাছিতে ২২টি, মহাদেবপুরে  ২৪টি, মান্দায় ১২টি, রানীনগরে ২২টি ও সাপাহার উপজেলায় ১৭টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

এ ছাড়া নতুন জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়গুলোও দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আধুনিক মানসম্মত শিক্ষা দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও কর্তৃপক্ষের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না এই পাহাড়সমান শিক্ষক সংকটের কারণে।

জেলার ১১টি উপজেলায় নতুন জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আত্রাই উপজেলায় ২৫টি, ধামইরহাটে ৫৩টি, নওগাঁ সদরে ৩৩টি, নিয়ামতপুরে ৫২টি, পত্নীতলায় ৬২টি, পোরশায় ৬৮টি, বদলগাছিতে ৬৬টি, মহাদেবপুরে ৬২টি, মান্দায় ৩০টি, রানীনগরে ৪৩টি ও সাপাহার উপজেলায় ৫৯টি পদ শূন্য রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘আমি প্রতি মাসেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর শিক্ষক চাহিদাপত্র পাঠাই। কিন্তু প্রতিবছর নতুন করে যে পরিমাণ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তা প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল। যদি অতি দ্রুত এই শিক্ষক সংকট সমাধান করা না যায়, তাহলে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হবে।’