খরচ কম লাভ বেশি

নওগাঁয় পাতি চাষে ঝুকছে চাষি

Looks like you've blocked notifications!

নওগাঁর রাণীনগরে চলতি রবিশস্য মৌসুমে ধান, গমের পাশাপাশি পাতি চাষে ঝুকছে চাষি। খরচ কম লাভ বেশি হওয়ায় ইরি-বোরো ধান চাষের আগ্রহ কিছুটা কমিয়ে বনপাতি ও জলপাতি চাষের দিকে কৃষকদের মনোযোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এক সময় এই জনপদে এ ফসল তেমন না হলেও মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ হিসেবে কদর বেশি থাকায় চলতি মৌসুমে অন্যান্য ফসলের সাথে রেকর্ড পরিমাণ পাতি চাষ করেছে এই উপজেলার কৃষকরা।  ইতিমধ্যেই মাঠ পর্যায়ে পাতি ভালো হওয়ায় কৃষকরা কাটা শুকানো শুরু করায় বাজারে পুরোদমে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে।  

গত বন্যায় রোপা-আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় আগাম গম চাষের সাথে পাতি চাষে ব্যস্ত হয়ে উঠে চাষিরা। সরকারিভাবে কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন ফসল চাষের জন্য কৃষি উপকরণ, বীজ, রাসায়নিক সার বিনা মূল্যে বিতরণ করা হলেও পাতি চাষের জন্য কোনো প্রকার সহযোগিতা করা হয় না। চলতি রবিশস্য মৌসুমে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা না দেওয়ায় পাতি চাষের পরিবেশ অনুকূলে থাকায় পাতির পাশাপাশি গম ও ভুট্টারও ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

গ্রামীণ জনপদের কৃষকরা এই পাতি ফাল্গুন মাসের শেষ দিকে অল্প পরিসরে ঘরে তুলে ভালো বিক্রয় মূল্য পাওয়ায় বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে তারা লাভবান হবে বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করেন।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে বনপাতি ও জলপাতি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চলতি বছরে উপজেলায় লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাতির আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং পাতির ক্ষেতে রোগ-বালাই না থাকায় এবং মাঠ পর্যায়ে পাতি চাষিদের উপসহকারী কৃষি অফিসাররা যথা সময়ে উপযুক্ত পরামর্শ নজরদারি এবং প্রত্যক্ষ কারিগরি সহযোগিতার দেওয়া কারণে পাতি ক্ষেত অনেকটা ভালো হয়েছে। তবে মিরাট, গোনা, কাশিমপুর, রাণীনগর সদর, কালীগ্রাম ও পারইল ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি পাতি চাষ হয়েছে। পাতি কাটার মৌসুমে রোদ ভালো থাকলে মানসম্পন্ন ভাবে শুকাতে পারলে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৫০ হাজার টাকার পাতি বিক্রি হবে।

উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের পাতিচাষি মো. ছানা ইসলাম, মো. মনছের আলী (চুন্ডি) বলেন, ‘আমরা এ বছর ইরি-বোরা ধান চাষের পাশাপাশি কিছু জমিতে পাতি চাষ করেছি। মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ পাতি হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি। খরচ কম লাভ বেশি হওয়ায় আমরা পাতি চাষ করছি। এ বছর কাটা এবং শুকানোর পর চরা দামে বিক্রি করতে পারলে আগামী বছরে পাতি চাষের পরিধি বৃদ্ধি করব।’  

উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে চার-পাঁচটি ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ পাতি চাষ হয়েছে। কুটির শিল্পের মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ পাতি। বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভ বেশি হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে কৃষকরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি জলপাতি চাষে ঝুকছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্চার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো প্রকার ক্ষতি না হলে রাণীনগর উপজেলায় জলপাতি আবাদ ভালো হবে বলে আশা করছি।’