দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের হালচাল

Looks like you've blocked notifications!

বাংলাদেশের ১১ শতাংশ মানুষ অন্তত একবার হলেও ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন। আর বাংলাদেশিদের মধ্যে যাঁরা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাঁদের ৬২ শতাংশই চাকরি খোঁজেন বা চাকরির আবেদনপত্র পাঠান। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন ৬৯ শতাংশ মানুষ, ভারতের ব্যবহারকারীদের চেয়ে যা ৬ শতাংশ বেশি। 

তবে সরকারি তথ্য পেতে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাংলাদেশে বেশ কম। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে মাত্র ২৬ শতাংশ সরকারি তথ্যের খোঁজ করেন। স্বাস্থ্যসেবার তথ্য খোঁজেন ২৮ শতাংশ। রাজনৈতিক তথ্য খোঁজার দিকে ঝোঁক বেশ বেশি ৫৬ শতাংশের। বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেশ কম। ব্যবহারকারীদের মাত্র ১৩ শতাংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওনা নিয়েছেন। ইন্টারনেটে পণ্য কেনার হার ২৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠদানের ক্ষেত্রে। এই হার মাত্র ৭ শতাংশ। পাশের দেশ ভারতে এই হার ২২ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষার এ তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তারা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

জরিপের তথ্যমতে, সারা বিশ্বেই মানুষের প্রাত্যহিক কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে। যুবসমাজ, সু-শিক্ষিত ও ইংরেজি জানা মানুষরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বেশি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিক্ষা, ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক কাজে ইন্টারনেটের বেশ প্রভাব দেখা যায়। তবে সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ইন্টারনেট মূল্যবোধের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মানুষ মনে করে। আর রাজনীতির ওপর ইন্টারনেটের প্রভাব নিয়ে মানুষ বিভক্ত। 

তথ্য মতে, উন্নয়নশীল দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৭৬ শতাংশই ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন। 

পিউ রিসার্চের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সব বিভাগীয় শহরে কয়েকটি ধাপে সমীক্ষা করা হয়। সমীক্ষা চলে ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ১১ মে পর্যন্ত। প্রায় একই সময়ে বিশ্বের উন্নয়নশীল অপর ৩১টি দেশে সমীক্ষা চলে। বাংলাদেশে সমীক্ষায় বাংলা ভাষা ব্যবহার হয়। প্রাপ্তবয়স্ক এক হাজার মানুষের ওপর গবেষণা চালানো হয়। 

৩২টি উন্নয়নশীল দেশের মানুষের কাছ থেকে নেওয়া তথ্য সূত্রে জানা গেছে, সেখানকার ৬৪ শতাংশ মানুষ মনে করে, ইন্টারনেট শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। ৫৩ শতাংশ মনে করে, ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার ইতিবাচক। আর ৫২ শতাংশের মতে, এটি অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। তবে রাজনীতির ক্ষেত্রে মানুষ বিভক্ত। রাজনীতিতে ইন্টারনেট ইতিবাচক ভূমিকা রাখে বলে মনে করে ৩৬ শতাংশ। কিন্তু একই ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মনে করে, এই প্রভাব নেতিবাচক। 

৩২টি দেশের ৪২ শতাংশ মানুষের মতে, মূল্যবোধের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের প্রভাব নেতিবাচক। আর ২৯ শতাংশের মতে, প্রভাব ইতিবাচক। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো দেশেই ইতিবাচক প্রভাব বলা মানুষের সংখ্যা বেশি নয়। 

সমীক্ষামতে, বাংলাদেশের ১১ শতাংশ মানুষ অন্তত একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে। ভারতে এই সংখ্যা ২০ শতাংশ, পাকিস্তানে ৮ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ২৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারের হার যুক্তরাষ্ট্রে ৮৭ শতাংশ। এরপরই আছে রাশিয়া ৭৩ শতাংশ। 

বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারের ৬২ শতাংশই ঘটে চাকরি খোঁজা বা চাকরির আবেদন পাঠানোর কাজে। ভারতে এই সংখ্যা ৫৫ শতাংশ। আর চীনে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারের ৫২ শতাংশই হয় জিনিসপত্র কেনাবেচার কাজে। বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৭৬ শতাংশই ফেসবুক, টুইটার বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে।
 
সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৮৪ শতাংশ মানুষ মুঠোফোন ব্যবহার করে। তবে স্মার্টফোন ব্যবহার করে ২৪ শতাংশ মানুষ। বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারীদের ৭৬ শতাংশ মোবাইল ব্যবহার করে। আর স্মার্টফোন ব্যবহার করে মাত্র ৬ শতাংশ। ভারতের এই সংখ্যা যথাক্রমে ৮১ ও ১৪। তবে ৩২টি দেশের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহারে শেষদিকে অবস্থান পাকিস্তানের। দেশটিতে মাত্র ৪৭ শতাংশ মানুষ মুঠোফোন ব্যবহার করে। আর স্মার্টফোন ব্যবহার করে মাত্র ৪ শতাংশ। 

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ১৫ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৪। ৬ শতাংশের বয়স ৩৫ বা এর বেশি। আর ৯ শতাংশ অন্য বয়সের। শিক্ষাগত যোগ্যতার হিসাবে ২৪ শতাংশ ব্যবহারকারী মাধ্যমিক বা এর ওপর শিক্ষিত। ৫ শতাংশ মাধ্যমিকের নিচে। আর ১৯ শতাংশের বেশি বিভিন্ন যোগ্যতার। ইংরেজিতে দ্ক্ষতার হিসাবে বাংলাদেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ১৭ শতাংশ ইংরেজি বলতে বা লিখতে পারদর্শী। ৫ শতাংশের দুটি যোগ্যতার একটিও নেই। আর ১২ শতাংশের বেশির যোগ্যতা ভিন্ন। বাড়িতে কম্পিউটার বা অন্য কোনো ইন্টারনেট ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি আছে এমন মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ। এখনো ল্যান্ডফোন আছে এমন মানুষের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ। 

পিউ রিসার্চের সমীক্ষায় দেখা গেছে, মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠানো এবং ছবি ও ভিডিও তোলায় বাংলাদেশি মোবাইল ব্যবহারকারীরা বেশ এগিয়ে। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর ৬৭ শতাংশ গত এক বছরে অন্তত একবার বার্তা বা মেসেজ পাঠিয়েছে। ভারতে এই সংখ্যা ৫০ শতাংশ। আর পাকিস্তানে ৩৭ শতাংশ। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর গড় ৭৬ শতাংশ। তবে ছবি ও ভিডিও তোলায় বাংলাদেশিরা গড়ের চেয়ে এগিয়ে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ছবি ও ভিডিও তোলার গড় ৫৫ শতাংশ। বাংলাদেশি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ৬৫ শতাংশ ছবি ও ভিডিও তোলে। ভারতে এই সংখ্যা ৩৮ শতাংশ। পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ। 

উন্নয়নশীল বিশ্বে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে দিনে অন্তত একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে এমন মানুষের সংখ্যা ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই সংখ্যা ৫৯ শতাংশ। 

পিউ রিসার্চের সমীক্ষায় আরো দেখা গেছে, বাংলাদেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৬৯ শতাংশ একে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের কাজে ব্যবহার করে। ভারতে এই হার ৬৩ শতাংশ। তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের ৫৬ শতাংশ রাজনৈতিক, ২৮ শতাংশ স্বাস্থ্যের ও ২৬ শতাংশ সরকারি বিভিন্ন সেবার তথ্য নেন। আর চাকরি বা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৬২ শতাংশ চাকরি খোঁজা বা চাকরির আবেদন করা, ১৩ শতাংশ অর্থ পাঠানো বা গ্রহণ, ২৩ শতাংশ কোনো পণ্য কেনায় ব্যবহার করে। আর দেশের মাত্র ৭ শতাংশ ব্যবহারকারী অনলাইন ক্লাসে অংশ নেয়। 

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৫৬ শতাংশ মনে করে, এটি শিক্ষা ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। ৪৮ শতাংশ মনে করে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখতে। আর অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে বলে মনে করে ৫০ শতাংশ। তবে রাজনীতি ও মূল্যবোধে ইন্টারনেট ভূমিকা কম বলেই মনে করে দেশের ব্যাবহারকারীরা। ব্যবহারকারীদের ৩৮ শতাংশ মনে করে রাজনীতিতে ইন্টারনেটের ভূমিকা ইতিবাচক। আর মূল্যবোধের ক্ষেত্রে ইতিবাচক বলে মনে করে মাত্র ২৯ শতাংশ।