ভোলায় নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধসহ আহত ৬০
ভোলার চারটি উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৬০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা। গতকাল শুক্রবার রাতব্যাপী এসব ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার এবং একটি দেশীয় শটগান উদ্ধার করেছে।
গুলিবিদ্ধ মো. সাইফুল ইসলামকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আলীনগরের এক সদস্য প্রার্থীর সমর্থক। আহতদের মধ্যে একজন মহিলা সদস্য প্রার্থী রয়েছেন। তিনি তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত প্রার্থী সালেহা বেগম। আহতদের ভোলা সদর হাসপাতাল, বরিশাল মেডিকেলসহ স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া মো. সম্রাট ও ইসরাফিল সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বশির আহমেদের সমর্থক। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
আহতদের কয়েকজন জানান, গতকাল রাতে ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশনের বিভিন্ন স্থানে আ. লীগ ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী, সদস্য প্রার্থীর সমর্থক এবং বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় চারটি মোটরসাইকেল, একটি অটোরিকশা, নির্বাচনী অফিস ও প্রচারণার মাইক ভাঙচুর করা হয়। এসব ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৬০ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশ জানায়, রাতে তজুমদ্দিন উপজেলার চাচরা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকরা একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রিয়াদ হোসেন হান্নানের সমর্থকদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালালে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় ভাঙচুর করা হয় চারটি মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। পরে খবর পেয়ে তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম তালুকদারসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে হান্নানের বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা রাস্তার ওপর গাছ ফেলে লালমোহনের মঙ্গল সিকদার-তজুমদ্দিনের সড়ক অবরোধ করে রাখে। হাতে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রসহ তাদের অবস্থান করতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রাস্তায় পুলিশ অবস্থান নেয়। প্রচারণার সময় উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সালেহা বেগমের ওপর প্রতিপক্ষ মজুফা বেগমের সমর্থকরা হামলা চালায়। পিটিয়ে আহত করে প্রার্থীসহ আটজনকে। এ সময় একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের তেমাথা নামক স্থানে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে প্রচারণার সময় হামলা চালানো হয়। এ সময় একপক্ষ গুলি ছুড়লে মো. সাইফুল ইসলাম আহত হন। এ ছাড়া ওই ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাইফুল ও ইউসুফকে রাতেই বরিশাল মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই স্থান থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি দেশীয় শর্টগান, দুটি গুলির খোসা উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বশির আহমেদের সমর্থক সম্রাট ও ইসরাফিলকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া একই উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগি ইউনিয়নের মনিরাম, উদয়পুর রাস্তার মাথাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী ও সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ হয় উপজেলার সাচড়া, পক্ষিয়াসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর সংঘর্ষ হয়। এতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলার চেয়ারম্যন হাটবাজারে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর প্রচারণার সময় আওয়ামী মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালিয়ে রিকশা ও মাইক ভাঙচুর করে। পিটিয়ে আহত করে রিকশাচালক ও প্রচারকর্মীকে।
ভোলার পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান মনির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থলগুলোতে দ্রুত পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আরো সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।