পাবনার ৪০ কেন্দ্রে জালভোট

Looks like you've blocked notifications!

পাবনার ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৪০টি কেন্দ্রে ব্যাপক জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, প্রকাশ্যে সিল প্রদানে বাধ্য করা এবং হুমকিধমকির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপের ভোট সম্পন্ন হয়েছে। এসব এলাকায়  বিভিন্ন কেন্দ্রে পুরুষের চেয়ে মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। 

দ্বিতীয় ধাপে ফরিদপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ৫৭টি কেন্দ্রে এবং ভাঙ্গুড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ৩৬টি কেন্দ্রসহ ৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ৪০টি কেন্দ্রে ভোটের আগেই ভোট সম্পন্ন হয়েছে বলে বিরোধী দলের প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন। 

সরেজমিন দেখা যায়, ফরিদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খলিলুর রহমান সরকার নিজে উপস্থিত থেকে খাগড়বাড়িয়া, কালিয়ানী, মাজহাট, ডেমড়া, গোপালনগর, হারোডাঙ্গা এলাকায় প্রভাব খাটান। তাঁর স্ত্রী ফরিদপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটারদের ভোট দিতে বাধ্য করান। তিনি নিজে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে তাঁর পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে ভোটারদের উৎসাহিত করেন। 

এ ব্যাপারে খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ফরিদপুর উপজেলায় সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি শুধু কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। কাউকে প্রভাবিত করেননি। 

এ ছাড়া, পারভাঙ্গুড়া, অষ্টমণীষা, পুঙ্গলী, বনওয়ারী নগর, বৃলাহিড়ীবাড়ী, খলিসাদহ, মৌদ, বালুঘাটা, ধানুয়াঘাটা কেন্দ্রসহ অন্তত ৪০টি কেন্দ্রে সকাল ১০টার মধ্যে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করা হয়। এসব কেন্দ্রের ভোটাররা ভোট দিতে গিয়ে দেখেন আগেই তাদের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। 

মৌদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটার তমিজ উদ্দিন তাঁর স্ত্রী রোজেনা সকাল সাড়ে ৯টায় কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন,.
 আগেই ভোট হয়ে গেছে। 

ডেমরা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ময়ল কুন্ডু জানান, বেলা ১২টার দিকে হারোডাঙ্গা একতা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ১০-১২ জনের একদল সশস্ত্র যুবক কেন্দ্রে ঢুকে নৌকা মার্কায় সিল মারতে থাকে। পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট ও বিজিবিকে খবর দেওয়া হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। 

এ ছাড়া কালিয়ানী কেন্দ্রের ভোটারদের মধ্যে ফিরোজ, নজরুল ও মন্তাজ আলীসহ ২৫-৩০ জন অভিযোগ করে বলেন, সকাল ৯টার সময় গিয়ে দেখেন কে বা কারা তাঁদের ভোট দিয়ে দিয়েছে। তাঁরা প্রশ্ন করে বলেন, ছবি থাকার পরও একজনের ভোট অন্যজন কীভাবে দিতে পারে? 

হারোডাঙ্গা একতা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আব্দুল বারী সরকার সামান্য সময়ের জন্য ভোট প্রদান বন্ধ ও জাল ভোট দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, পোলিং অফিসার বা প্রিসাইডিং অফিসারের পক্ষে এককভাবে এত কিছু দেখা সম্ভব নয়। 

দ্বিতীয় ধাপে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা, পুঙ্গলী, হাদল, ফরিদপুর, বনওয়ারীনগর এবং বৃলাহিড়ীবাড়ী এবং ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া, খানমরিচ, দিলপাশার এবং অষ্টমণীষা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৯৩টি ভোটকেন্দ্রে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ ভোট প্রদান করে বলে জানা গেছে।

 বিএনপি মনোনীত ডেমরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তালেব আলম, বিএনপির বিদ্রোহী মলয় কুন্ডু, স্বতন্ত্র রবিউল ইসলাম রবি, ফরিদপুর ইউনিয়নের জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী রবিউল করিম, হাদল ইউনিয়নের বিএনপির রওশন আলী মোল্লা ও স্বতন্ত্র মজনু মিয়া ব্যাপক কারচুপি, ব্যালটে প্রকাশ্যে সিল মারতে বাধ্য করা, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ নানা অভিযোগ করেছেন।  
 
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে সামান্য কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এত কিছুর পরও শান্তিপূণ ভোট সম্পন্ন হয়েছে।