টোকাই শিশুকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন

Looks like you've blocked notifications!
ফেনী পৌর এলাকার কালিপালে চুরির অভিযোগ এনে টোকাই এই শিশুকে এভাবে নির্যাতন চালানো হয়। ছবি : সংগৃহীত

ফেনী পৌর এলাকার কালিপালে চুরির অভিযোগ এনে টোকাই এক শিশুকে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়েছে। শিশুটিকে বিবস্ত্র করে দোকানঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক পেটানো হয়। এরপর সে অচেতন হয়ে পড়ে।

গত ১ এপ্রিল এই ঘটনা ঘটলেও গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আজ বুধবার দুপুরে ফেনী থানার পুলিশ শহরের সহদেবপুর এলাকা থেকে নির্যাতনের শিকার শিশু রনিকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ১ এপ্রিল শুক্রবার জুমার নামাজের পর শিশু রনিকে বিবস্ত্র করে শহরের কালিপাল দশমী ঘাটসংলগ্ন প্রদীপ চন্দ্র দাসের ওয়ার্কশপের সামনে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লাঠি ও রড দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে সড়কের ওপর লাগানো ব্যানার ছিঁড়ে বেঁধে ফেলা হয়। এমনকি বৈদ্যুতিক শকও দেওয়া হয়। স্থানীয় কেউ ওই ঘটনার ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। গতকাল মঙ্গলবার ছবিটি আলোচনায় আসে।

এরপর বিকেলে প্রদীপ চন্দ্র দাস ও তাঁর তিন কর্মচারী মৃদুল, সুমন ও পারভেজকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

প্রদীপ চন্দ্র দাস জানান, তিনি ঘটনার সময় দোকানে ছিলেন না। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় অজ্ঞাতনামা ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী ওই শিশুটি তাঁর দোকানের পেছন দিয়ে বেড়া কেটে চুরির উদ্দেশ্যে ভেতরে ঢোকে। এ সময় আশপাশের লোকজন টের পেয়ে তাকে আটক করে মারধর করে ছেড়ে দেয়। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি ছবি দেখে অর্জুন দাস ও শহীদকে শনাক্ত করেছেন। অর্জুন দাস কালীমন্দির মার্কেটের হরে কৃষ্ণ স্টোরের মালিক এবং শহীদ পুলিশ লাইনের কাছে একটি দোকানের মালিক।

এ ব্যাপারে জানতে অর্জুন দাসের দোকানে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে তিনি জানান, বাড়ি থেকে শহরে ফেরার পথে শিশুটিকে আটক অবস্থায় দেখতে পেয়ে তিনি এগিয়ে যান। চুরির কথা শুনে তিনিও কয়েকটি বেত্রাঘাত করেন।

ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহীনুজ্জামান জানান, নির্যাতনের শিকার শিশুকে তাঁরা উদ্ধার করেছেন। নির্যাতনকারীদের নাম-পরিচয় শনাক্ত করতে তারা তদন্ত করছেন।  

সাংবাদিকদের সামনে রনি

আজ বুধবার বিকেলে সাংবাদিকদের সামনে শিশু রনিকে হাজির করে পুলিশ। রনি জানায়, গত শুক্রবার সে ভাঙা বোতলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র সংগ্রহ করছিল। ওয়ার্কশপের কাছে গিয়ে দেখে একটি ঘরের টিন ভাঙা। সেখান থেকে পরিত্যক্ত বোতল তুলে নেয়। এরপরই তাকে ধরে নির্যাতন করা হয় বলে রনি জানায়। ছবি দেখে সে নির্যাতনকারীদের চিহ্নিত করে। 

রনি জানায়, তাদের বাড়ি কুমিল্লার লাকসামের ফাজিলপুরে। পাঁচ বছর ধরে তারা ফেনীর সহদেবপুরে আছে। তার আরো দুই বোন আছে। বাবা ভাঙা জিনিসপত্র কেনাবেচার ব্যবসা করেন। তবে তাদের পরিবারকে কোনো রকম সাহায্য করেন না। সেই (রনি) ভাঙা জিনিসপত্র সংগ্রহ ও বিক্রি করে মাকে টাকা-পয়সা দেয়। সেই টাকা দিয়ে চলে সংসার।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার রেজাউল হক। তিনি বলেন, ‘শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই নাম বলা হচ্ছে না।’

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার শাহরিয়ার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মোর্শেদ।  

এর আগে গত বছরের ৮ জুলাই সিলেট শহরতলির কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে চুরির অভিযোগ এনে প্রকাশ্যে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনকে (১৩)  পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় নির্যাতনের ভিডিওচিত্রও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়।