ভাটায় নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি, উদ্বেগ

ইট প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হচ্ছে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি বা টপ সয়েল। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন শরীয়তপুরের কৃষকরা। তাঁরা বলছেন, জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় একদিকে যেমন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, গভীর তলদেশে মাটি কাটার ফলে পাশের জমিও ভেঙে পড়ছে।
কৃষকরা বলছেন, ভাটা করার অনুমোদন দেওয়ার সময় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয় ভাটার মালিকদের। কিন্তু তা অমান্য করে শরীয়তপুরে প্রায় ৩০টি জায়গা থেকে ইটভাটায় ব্যবহার করার জন্য কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কাটা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, শরীয়তপুরে প্রায় ৪০টি ইটভাটা রয়েছে। ভাটাগুলোতে বছরে আট মাস ইট প্রস্তুত করা হয়। প্রতিটি ইটভাটায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ ইট প্রস্তুত করা হয়। এসব ইট প্রস্তুত করার জন্য কৃষিজমির উপরিভাগের এঁটেল মাটি ব্যবহার করা হয়। স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাটি কিনে ভাটার মালিকরা এ মাটি কিনে নেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এক হাজার ৫০০ ফুটের এক গাড়ি মাটির মূল্য স্থানভেদে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা। প্রতিটি ইটভাটায় বছরে চার থেকে পাঁচ লাখ গাড়ি মাটি ব্যবহার করা হয়।
ইটভাটার মালিক ও মাটি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুরের প্রায় ৩০টি জায়গা থেকে ইটভাটার জন্য মাটি কাটা হচ্ছে। কৃষিজমি, সড়কের পাশ থেকে এ মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হয়। মাটি কাটার ফলে একদিকে যেমন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে পাশের জমি ধসে পড়ে যাওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সদর উপজেলার ঘাগরিজোরা গ্রামের কৃষক বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘কৃষিজমি থেকে গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ফলে পাশের জমিগুলো ভেঙে পড়ছে। আমরা বাধা দিলেও মাটি ব্যবসায়ীরা তা মানেন না।’ এভাবে মাটি কাটা হলে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
নড়িয়া উপজেলার নশাসন গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফসলি জমির মাঝ থেকে যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে, তাতে আমরা শঙ্কিত। মাটি কাটা বন্ধ না করা হলে ফসল উৎপাদন কমে যাবে।’
জাজিরা উপজেলার লাউখোলা গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী সেকান্দার সরদার বলেন, ‘জমির মালিকের কাছ থেকে মাটি কিনে ইটভাটায় বিক্রি করি। এ কাজে কেউ কখনও আমাদের বাধা দেয়নি।’
শরীয়তপুর জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ইট তৈরি করতে মাটি প্রয়োজন, এ বিষয়টা সবাইকে বুঝতে হবে। মাটি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমরা মাটি কিনি। তারা কোথা থেকে মাটি সংগ্রহ করে, তা আমরা জানি না।’
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কবির হোসেন বলেন, ‘ইটভাটায় মাটির ব্যবহার হবে, এটাই স্বাভাবিক। ভাটা স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার সময় তাদের বলে দেওয়া হয়, যাতে কৃষিজমির টপ সয়েল ব্যবহার করা না হয়। এর পরও প্রতিনিয়ত কৃষিজমির টপ সয়েল কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ছে। মাটি বিক্রি না করার জন্য আমরা নিয়মিত কৃষকদের সচেতন করছি।’