বরের দুই পা ভাঙার ঘটনায় এসআই বরখাস্ত

Looks like you've blocked notifications!

গাজীপুরে বিয়েবাড়ি থেকে হবু বরকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলী আকবরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা জানান, বৃহস্পতিবার একজন কর্মকর্তা পাঠিয়ে ঘটনাস্থল তদন্ত করানো হয়েছে। এসআই আলী আকবর তদন্ত না করে আসামি ধরতে যাওয়ায় তিনি দায়িত্বে অবহেলা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য তাঁকে আজ শুক্রবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অপর এসআই ফিরোজের ব্যাপারে অভিযোগের সত্যতা এখনো পাওয়া যায়নি।

এদিকে বর রুবেলের পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় তাঁর বাবা নূরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার আটজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন।

আহতের পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হায়দরাবাদ মধ্যপাড়া এলাকার নূরুল ইসলামের ছেলে রুবেল হোসেনের (২৪) সঙ্গে পাশের ধীরাশ্রম এলাকায় ইব্রাহীমের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়। রুবেল টঙ্গীর একটি ক্যাবল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আজ শুক্রবার ছিল বরযাত্রা ও বিয়ের দিন এবং শনিবার ছিল বৌ-ভাত। বিয়ের প্যান্ডেল ও গেট নির্মাণ থেকে শুরু করে সব আয়োজন সম্পন্ন হয়। প্রায় এক হাজার মেহমান দাওয়াত দেওয়া হয়। বিয়ে উপলক্ষে গত বুধবার বিকেল থেকেই রুবেলের বাড়িতে গান-বাজনা ও উৎসবের আমেজ চলছিল। ওই দিন রাতে ঘরেই ছিলেন রুবেল। দিবাগত রাত দেড়টার দিকে জয়দেবপুর থানার এসআই আলী আকবর ও ফিরোজ উদ্দিনসহ পাঁচজন পুলিশ সদস্য হানা দেন বিয়েবাড়িতে। মামলার কথা বলে তাঁরা রুবেলকে জোর করে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান। পরে হায়দরাবাদ এলাকার রেললাইনের পাশে একটু নিচু জমিতে নিয়ে রড ও লাঠিসোটা দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটান। এতে তাঁর দুই পা ভেঙে যায় এবং অচেতন হয়ে পড়েন রুবেল। পরে পুলিশ তাঁকে ওই স্থানেই ফেলে রেখে চলে যায়। রাত আড়াইটার দিকে রুবেলের স্বজন ও এলাকাবাসী তাঁকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে সেখান থেকে বৃহস্পতিবার সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় দুই পরিবারের সব আয়োজন লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। রুবেলের হবু শ্বশুর ধীরাশ্রম এলাকার ইব্রাহীম বলেন, মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে এক হাজার ২০০ লোকের আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু এ ঘটনায় সেসব আয়োজন বাতিল করা হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলের প্যান্ডেল ও বিয়ের আসন খুলে ফেলা হয়েছে। মেহমানদের দাওয়াতে আসতে বারণ করা হয়েছে। রুবেল আগে সুস্থ হয়ে উঠুক। তারপর বিয়ের চিন্তা করা যাবে।

এদিকে বিয়েবাড়ি থেকে হবু বরকে উঠিয়ে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় স্বজন ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তাঁরা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত জয়দেবপুর থানার এসআই আলী আকবর ও এসআই ফিরোজ উদ্দিনসহ পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবি করেন।

রুবেলের মামাতো ভাই মিলন বলেন, বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে টয়লেট সেরে রুবেল তাঁর ঘরে প্রবেশের সময় সাত-আটজন লোক এসে আইনের পরিচয় দিয়ে রুবেলের মুখ চেপে ধরে। পরে তাঁকে পেটাতে পেটাতে বাড়ির বাইরে বের করে। এ সময় পুলিশের পোশাকে চারজন এসে তাদের সঙ্গে যায়। পুলিশ সদস্যরাও রুবেলকে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন।

ঘটনার ব্যাপারে জয়দেবপুর থানার এসআই আলী আকবর দাবি করেন, ‘রুবেলের বিরুদ্ধে সোহেল নামের একজন বাদী হয়ে মারামারির মামলা করেছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে এসআই ফিরোজসহ চারজন গিয়েছিলাম। আমি রুবেলকে মারিনি। তিনি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালাতে গিয়ে আহত হয়েছেন, তাঁর পা ভেঙেছে। আমার বিরুদ্ধে রুবেলকে পেটানোর অভিযোগ সত্য নয়।’

তবে রুবেলের বাবা নূরুল ইসলাম জানান, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীরা একটি মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আর পুলিশ বিয়ের দুদিন আগে ছেলেটারে ধরে নিয়ে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দিয়েছে। ঘটনার সঙ্গে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেন তিনি।