রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা

Looks like you've blocked notifications!
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রশাসক জিয়াউল হক টুকু। ছবি : ফোকাস বাংলা

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রশাসক জিয়াউল হক টুকুকে (৪৮) গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আজ রোববার বিকেল ৪টার দিকে নগর ভবনের সামনে নিজ ব্যবসায়িক চেম্বারে নয়ন নামের এক ব্যক্তির গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপর তাৎক্ষণিকভাবে টুকুকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, টুকুর ডান পাশের বগলের নিচে গুলি লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান।

টুকুর হত্যাকারী নয়নের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। টুকুর বন্ধু রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান জানান, তিনি শুনেছেন নয়ন ঢাকার মতিঝিল এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। টুকুর সঙ্গে নয়নের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল বলে তাঁর জানা নেই।

জামাত খান জানান, নয়ন রাজশাহী নগরীর ডা. সালাউদ্দিনের ছেলে তরিকুলের বন্ধু বলে তিনি শুনেছেন। তরিকুলের সঙ্গে জিয়াউল হক টুকুর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে শনিবার নয়ন টুকুর ব্যবসায়িক চেম্বারে প্রথম এসেছিলেন বলে তিনি শুনেছেন। রোববারও নয়ন ও তরিকুল একসঙ্গে টুকুর চেম্বারে এসেছিলেন।

জামাত খান জানান, নয়ন ও তরিকুলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারলেই টুকু হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে।

নিজস্ব চেম্বারে টুকু গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তরিকুলের ব্যক্তিগত গাড়িতে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় নয়ন ও তরিকুল ছাড়াও সঙ্গে ছিলেন টুকুর চেম্বারে উপস্থিত রবিউল ও জসিম নামের দুই ব্যক্তি। তাঁরা প্রায় সার্বক্ষণিকই টুকুর সঙ্গে থাকতেন।

হাসপাতালে টুকু মারা যাওয়ার পর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও বোয়ালিয়া মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার গোলাম সাকলায়েনের উপস্থিতিতে রবিউল ও জসিম সাংবাদিকদের জানান, টুকুর ব্যবসায়িক চেম্বারটি তিন কক্ষের। প্রথম কক্ষে তাঁদের সঙ্গে তরিকুল দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। জসিম নগরীর একটি হোটেল থেকে টুকু ও নয়নের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলেন। সেই খাবার চেম্বারের সবশেষ ঘরে টুকুর ব্যক্তিগত কক্ষের টেবিলে দেওয়া হয়েছিল। তখনো টুকু ও নয়ন খাবার শুরু করেননি। এমন সময় ভেতরের কক্ষ থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়।

রবিউল ও জসিম জানান, শব্দ শুনে তাঁরা খাবার ফেলে ভেতরের ঘরে যাওয়ার জন্য উঠতেই টুকুকে ধরে নয়ন বেরিয়ে আসে। এ সময় টুকু তাঁদের বলেন, ‘আমার গুলি লেগেছে। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাও।’ তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরা টুকুকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পর দুবার নিশ্বাস নিয়েই টুকু নিস্তেজ হয়ে যান। এ সময় চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাতে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, জিয়াউল হক টুকুর চেম্বারে থাকা তাঁর ব্যবসায়িক বন্ধু নয়ন ফোন করে টুকুকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

আসাদ জানান, নয়ন তাঁকে বলেছে ঘটনার সময় টুকুর পিস্তলটা নয়নের হাতে ছিল। টিগারে হাত ছিল। পিস্তলের ম্যাগাজিনটা পরীক্ষার সময় অসাবধানতাবশত গুলি বের হয়ে টুকুর লাগে। নয়ন বলেছে, তাঁর কাছ থেকেই গুলি লেগেছে। তিনি ঢাকায় আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন।

আওয়ামী লীগ নেতা আসাদ বলেন, এ কথা বলার পরই নয়ন ফোন কেটে দেন। এর পর থেকে তাঁকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।

আসাদ জানান, ফোনে নয়নের স্বীকারোক্তির সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএস খায়রুজ্জামান লিটনও ছিলেন। লিটনকেও ফোনে একই কথা বলেছেন নয়ন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, নয়নের স্বীকারোক্তির বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ অভিযানও শুরু করেছে। আসাদ বলেন, নয়নের পুরো পরিচয় তিনি জানেন না। তিনি ঢাকার ব্যবসায়ী বলে শুনেছেন। মাঝেমধ্যেই তিনি জিয়াউলের কাছে আসেন বলে তিনি জেনেছেন।

ঘটনার পরপরই পুলিশ জিয়াউল হক টুকুর ব্যবসায়িক কার্যালয়টি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

জিয়াউল হক টুকু দুই ছেলে ও স্ত্রীসহ রাজশাহী নিউমার্কেটের পাশের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। নগরীর ষষ্ঠীতলায় তাঁর পৈতৃক বাসা।

টুকুর বড় ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছে এ ব্যাপারে তাঁরা কিছুই জানেন না। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন খান বলেন, নয়ন নিজেই ফোন দিয়ে গুলির কথা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে স্বীকার করেছেন। এর পর থেকে পুলিশ তাঁকে ধরতে অভিযান শুরু করেছে। তাঁকে ধরতে পারলেই প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।

সন্ধ্যায় নগর ভবনের সামনে জিয়াউল হক টুকুর ‘সিটি চেম্বার’-এ গিয়ে দেখা যায়, বাইরে পুলিশের কয়েকটি ভ্যান দাঁড়ানো। চেম্বারের ভেতরে সিআইডি ও পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা আলামত সংগ্রহ করছেন।

পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনাস্থলে একটি পিস্তল পাওয়া গেছে। পিস্তলের ম্যাগাজিনে পাঁচটি গুলি রয়েছে। যে গুলিতে টুকু নিহত হয়েছেন, সে গুলিও সেখানে পড়ে আছে। ওই গুলির পাশে আছে গুলির খোসা। সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে জিয়াউল হক টুকু দুই ছেলের জনক ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম লতা বেগম। তিনি গৃহিণী। স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। টুকুর দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রওনক এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। আর ছোট ছেলে রনু রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। রাজনীতি করার পাশাপাশি টুকু বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ছিলেন।