দুর্গাপুরে সাদামাটি উত্তোলন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : এনটিভি

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় পরিবেশগত ক্ষতির তোয়াক্কা না করে এবং  হাইকোটের নির্দেশ অমান্য করেই চলছে সাদা মাটি উত্তোলনের মৎসব। উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের মাইজপাড়া, আড়াপাড়া ও পাঁচকাহানিয়া মৌজা থেকে পাহাড় ও টিলা ধ্বংস  করে ও পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই  কিছু অসাধু লোক দিনের পর দিন এ কাজ করছে। তাও আবার প্রশাসনের নাকের ডগায়।

১৯৬৯ সাল থেকে বাংলাদেশে সাদামাটি উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। এ সাদা মাটি বা চিনামাটি সিরামিক শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নেত্রকোনার এসব অঞ্চলে থেকে কতিপয় ব্যক্তি ও কোম্পানির যত্রতত্র পাহাড় ও ছোট টিলা কেটে মাটি সংগ্রহ করছে। ফলস্বরূপ এ অঞ্চলের পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে এবং গাছপালা ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।

এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনানুগ প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রতিকার চেয়ে ব্যর্থ হন। পরে তাঁরা  বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতির (বেলা) কাছে আইনগত সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। এলাকাবাসীদের আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর জনস্বার্থে বেলার পক্ষ থেকে এই মামলা দায়ের করা হয়।

জানা যায়, দুর্গাপুরের মাইজপাড়া, আড়াপাড়া ও পাঁচকাহানিয়া মৌজা থেকে পাহাড় ও টিলা ধ্বংস করে ও পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া সাদা মাটি উত্তোলনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) হাইকোর্টে একটি রিট (নং ১১৩৭৩/২০১৫) করেন। মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে, গত ১৪ মার্চ, ২০১৬ তারিখে আদালত উল্লেখিত মৌজায় অবস্থিত পাহাড় ও টিলা অবৈধ  ও অপরিকল্পিতভাবে কর্তন এবং অননুমোদিত ও নির্বিচারে পরিবেশগত ছাড়পত্র ও পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ছাড়া সাদা মাটি উত্তোলনকে কেন আইন বহির্ভূত ও আইনগতভাবে ভিত্তিহীন ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে তিন সপ্তাহের রুল জারি করেন। একই সাথে মামলা চলাকালীন পরিবেশ আইন ও বিধিমালার সাথে সমন্বয় ছাড়া উল্লেখিত মৌজাগুলো থেকে সাদা মাটি উত্তোলন প্রতিরোধ করতে বিবাদীদের ওপর নির্দেশ দেন।

বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও  বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

মামলার বিবাদী ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবরা, পরিবেশ অধিদপ্তরে মহাপরিচালক, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক, নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, দুর্গাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ মোট ২২ জন। বেলার পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী।

রের ওই সব এলাকায় নয়টি কোম্পানি নিয়মিতভাবে সাদামাটি উত্তোলন করে আসছিল। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা মেনে ছয়টি কোম্পানি সাদামাটি উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ করে। কিন্তু ২১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- মোমেনশাহী সিরামিক অ্যান্ড গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ, জার্ডিন ইন্টারন্যাশনাল, জাকের রিফ্যাক্টরি অ্যান্ড টাইলস এন্টারপ্রাইজ হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা না মেনে অবাধে মাটি উত্তোলন ও পরিবহন করে যাচ্ছে । অথচ  খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো গত ০৪/০৪/১৬ইং তারিখ খসউ ব্যৃ/সামা-সি বালি/স-২৩০/০২(খন্ড-২)১২৮৭ থেকে ১২৯৭ স্মারকে সকল মাইন মালিকদের সাদামাটি উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুলিপি দেন।

সরকার দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে  এক বছর আগে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেরাতলী গ্রামের রাস্তার মুখে সাদামাটি চেকপোস্ট চালু করে। এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূমি সহকারী রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে শতাধিত ট্রাকটার ও লড়ি সাদামাটি নিয়ে যায়। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে মাটি নেওয়ার কাজ।

নাম না বলা শর্তে স্থানীয়দের কয়েকজন জানান, কর্মকর্তারা যাওয়ার পরেও রাতে অনেক ট্রাকটার ও লড়ি চেকপোস্ট দিয়ে বের হয়। এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে হরিলুট।

এ বিষয়ে দুর্গাপুরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে  বলেন, ‘সাদামাটি উত্তোলন ও অপসারণ বন্ধের কোনো চিঠি এখন পর্যন্ত আমি পাইনি, তবে বিষয়টি যেহেতু এখন জানতে পেরেছি অবশ্যই জেলা প্রশাসনের সহায়তায় এ বিষয়ে খুব দ্রুতই পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’