পাবনার সুজানগরে নৌকার বিপক্ষে আ. লীগের প্রচারণা !

Looks like you've blocked notifications!

আগামী ৭ মে পাবনার সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিটি দলের নেতাকর্মীরা যখন দলীয় প্রার্থীর জন্য প্রচার-প্রচারণায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন, তখন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করছেন খোদ দলেরই নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগ মনোনীত বেশ কয়েকজন প্রার্থীর অভিযোগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব ও তাঁর পক্ষের কিছু নেতা এ ঘটনার পেছনে রয়েছেন। নৌকা প্রতীক বরাদ্দ পাওয়া প্রার্থীদের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাবের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তৃণমূল ভোটে ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটিতে সভাপতি এবং অপর পাঁচটিতে সাধারণ সম্পাদক সমর্থিত নেতারা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রত্যেক প্রার্থীই নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা শুরু করলেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দ্বন্দ্বের কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই নিজ দলের মনোনীত প্রার্থীদের বিরোধিতা করছেন। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অর্থাৎ বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে মিছিল মিটিং করাসহ নানা রকম নৌকা প্রতীকবিরোধী কাজ করছেন আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী।

উপজেলার দুলাই, মানিকহাট, নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল কাশেম সমর্থিত প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এসব ইউনিয়নে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব সমর্থিত কিছু নেতাকর্মী নৌকার বিরোধিতা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দুলাই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম শাজাহান বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম বাচ্চু মোল্লা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। আব্দুল ওহাব নিজে এবং কিছু নেতাকর্মী নৌকার বিরোধিতা করে বাচ্চু মোল্লার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন, যা সংগঠন পরিপন্থী কাজ । ওহাব জনপ্রতিনিধি হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট চাচ্ছেন। বিষয়টি প্রশাসন ও জেলা আওয়ামী লীগকে অবহিত করা হয়েছে।

শাজাহানের দাবি, আবদুল ওহাবের সমর্থকরা অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে এবং বিষয়টি জেনেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এদিকে মানিকহাট ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমিনুর রহমান জানান, তাঁর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা ওমর আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ওমর আলীর সমর্থকরা দাসপাড়া মোড়ে আমিনুর রহমানের ঝুলন্ত নৌকা নামিয়ে ভেঙে তার ওপর প্রাকৃতিক কাজ সেরে রেখে যায়। বিষয়টি প্রশাসন ও জেলার নেতাদের জানিয়েছেন তিনি। তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মশিউর রহমান জানান, তৃণমূলের ভোটে বিজয়ী হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে এবার তিনি নির্বাচন করছেন। বিজয়ী হওয়ার আশাও করছেন। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তাঁর সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল হাই হাজারী, ইউনিয়ন সভাপতি ছাত্তার মল্লিক, সহসম্পাদক জলিল মোল্লাসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী দলীয় প্রতীক নৌকার বিরোধিতা করে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছেন। এসব আওয়ামী লীগের নেতা এখন নৌকার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

এসব বিষয়ে স্থানীয় ভোটার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মনে করছে সুজানগরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের এই রেষারেষির কারণে আদতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দল। গ্রুপিংয়ের কারণে আওয়ামী লীগকেই নৌকা প্রতীকের প্রতিপক্ষ বলে মনে হচ্ছে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে সুজানগর উপজলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাবের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেছেন, যারা নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করে কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।