বাবার কাঁধে ভর করে নির্যাতনের কথা জানালেন আরিফিনা

Looks like you've blocked notifications!
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বাবার বাবার কাঁধে ভর দিয়ে লিখিত বক্তব্য দেন নির্যাতিতা গৃহবধূ আরিফিনা। ছবি : এনটিভি

‘বিয়ের পর থেকে দফায় দফায় টাকা দিয়েছেন আমার বাবা। জমি কিনে বাড়ি করে দিয়েছেন। তাতেও মন ওঠেনি। আরো যৌতুকের দাবিতে আমাকে ঘরে আটকে রেখে বেদম পিটিয়েছে। ছুরি দিয়ে মাথা ও হাতে আঘাত করেছে। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাদ থেকে ফেলে দেয় আমার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেবর। এতে আমার পাঁজর ও মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে।’

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কাকডাঙ্গা গ্রামের আবদুল মতলেবের মেয়ে আরিফিনা খাতুন আজ মঙ্গলবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বাবার কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে এসব অভিযোগ করেন। সে ১৫ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

২০০৯ সালে একই উপজেলার ভাদিয়ালি গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে মিথুন রানার সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে মিথুন তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরিফিনা বলেন, বিয়ের প্রথম দুই বছরে কয়েক দফায় মিথুনকে চার লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া হয়। তার পরও শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন বন্ধ হয়নি। শুধু আমার সুখের জন্য শ্বশুরের কোনো ভিটা না থাকায় আমার বাবা সোনাবাড়িয়ায় তিন কাঠা জমি কিনে সেখানে বাড়িও করে দেন। এমনকি আসবাবগুলোও বাবার বাড়ি থেকে এনেছি। এর কিছুদিন পর ওই জমি আমার কাছ থেকে মিথুন রানা কৌশলে হেবা দলিল করে নেয়। একই সঙ্গে চলতে থাকে নির্যাতন। বিদেশ যাওয়ার জন্য ফের তিন লাখ টাকা যৌতুক চায় মিথুন। তখন আমার বাবা আর টাকা দিতে রাজি হননি। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমি যৌতুক আইনে এবং হেবা দলিলের জন্য মামলা করি, যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। গত আট মাস ধরে আমার আশ্রয় পিত্রালয়ে।’

আরিফিনা আরো বলেন, “গত ১৪ এপ্রিল মিথুন আমাকে তালাকনামা পাঠায়। আমি তা গ্রহণ না করে ২১ এপ্রিল আমার বাবার দেওয়া বাড়িতে গেলে মিথুন, শ্বশুর আশরাফ, শাশুড়ি খায়রুন, দেবর মনু ও প্রতিবেশী ইনসানসহ অন্যরা আমাকে ঘরে আটকে রেখে পিটিয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে মাথা ও হাতে আঘাত করেন। আমি প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে ছাদে গেলে সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় আমাকে। এতে আমার পাঁজর ও মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়। তারা বলেন, ‘তালাক দেওয়া বউয়ের মুখ দেখতে নেই।’ আমি এখন পঙ্গু।”

আরিফিনা জানান, তাঁর শ্বশুর আশরাফ ও সোনাবাড়িয়া চেয়ারম্যান মনিরুল ভারতীয় চোরাই গরুর ব্যবসা করে। সেই সুবাদে দুজনের মধ্যে ভালো সম্পর্ক। মারধরের সময় আশরাফ চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি তাকে বলেছেন, ‘পিটিয়ে লাশ বানিয়ে আমারে খবর দিস। থানা পুলিশ আমি দেখব।’ তবে চেয়ারম্যান মনিরুল বলেন, ‘আমি এ কথা বলিনি। তা ছাড়া মেয়েটি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। তাই আঘাত লেগেছে।’ কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সালেহ মাসুদ করিম জানান, মেয়েটি আত্মহত্যার চেষ্টায় ছাদের ওপর থেকে লাফ দিয়েছিল বলে তিনি খবর পেয়েছেন।

কেড়াগাছি ইউপি সদস্য ইয়ার আলী বলেন, ‘আরিফিনার বিষয়টি নিয়ে আমরা দফায় দফায় সালিশ করেছি। কিন্তু ছেলেপক্ষ তা মানেনি। শেষ পর্যন্ত তাঁকে আদালতের শরণাপন্ন হতে বলেছিলাম।’ মেয়েটির পরিবার নিরীহ বলে দাবি করেন তিনি।

আরিফিনা জানান, কলারোয়া থানা পুলিশ প্রথমে মামলাটি নিতে চায়নি। পরে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে মামলা নিলেও আসামিদের ধরছে না পুলিশ। চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আরিফিনা অভিযোগ করে জানান, চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘পুলিশ ওদের ধরবে না। সে ব্যবস্থা করেছি। আর ধরলেও আমি ছাড়িয়ে আনার ক্ষমতা রাখি।’

আরিফিনার এই অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান মনিরুল বলেন, ‘এসব কথা আমি বলিনি। তবে মানুষ বিপদে পড়লে তো আমার কাছে আসেই। কিছু অভয় তো তাদের দিতেই হয়।’

কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন কাকডাঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলাম, বাগাডাঙ্গার সিরাজুল হক এবং আরিফিনার বাবা মতলেব আলী ও ভাই মাহমুদুল হক।