নওগাঁয় আমের বাম্পার ফলন, সংরক্ষণ নিয়ে শঙ্কা

Looks like you've blocked notifications!
নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা উপজেলার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ছবি : এনটিভি

নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে সংরক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় শঙ্কায় চাষিরা। 

এ দুটি উপজেলার মাটি আম চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী হওয়ায় বিগত বেশ কয়েক বছর আম চাষের নীরব বিপ্লব ঘটেছে। এ অঞ্চলে সাধারণত হাইব্রিড জাতের আম্রপালি, চষা, মল্লিকা, বারী ৩, ৪ ও দেশি জাতের মধ্যে ফজলি, সুরমা ফজলি, নাক ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাতি, মোহনভোগসহ বিভিন্ন জাতের সুমিষ্ট আম চাষ হয়ে থাকে এখানে।

আমের মৌসুমে প্রতিদিন শত শত টন আম এই এলাকা থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। এমনকি গত মৌসুমে পোরশা উপজেলার ঘাটনগর এলাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বারী-৪ জাতের আম রপ্তানি করা হয়েছিল। চলতি মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্ব থেকে দুই উপজেলার বিভিন্ন আমের আড়তগুলোতে শত শত শ্রমিক ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এফ এম গোলাম ফারুক হোসেন বলেন, চলতি বছর প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ টন হিসেবে প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার টন আমের উৎপাদন হবে, যা দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। 

পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, এবার মৌসুমের শুরু থেকেই প্রতিটি গাছে ব্যাপক মুকুল ও গুটি আসে। এর পর থেকে আম বাগান মালিকরা ভালো ফলন পাওয়ার আশায় পরিচর্যা করছেন। নিয়মিত আমগুলো টিকিয়ে রাখতে দিনে দুই থেকে তিনবার গাছে পানি স্প্রে করাসহ ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছেন। 
পোরশা উপজেলার আম চাষি হাবিবুর রহমান বলেন, আম যেন গাছ থেকে ঝরে পড়ে না যায়, এ জন্য পানি স্প্রে ও বালাইনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। একই উপজেলার সরাইগাছী এলাকার বাগান মালিক রাশেদ বলেন, কয়েক দিন আগে তীব্র খরায় বোঁটা শুকিয়ে গিয়ে আম সামান্য ঝরে পড়ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টি হওয়ার পর থেকে আর তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে আমের উৎপাদন এবার খুব ভালো হবে।

সাপাহারের বাগান মালিক তছির উদ্দীন সোনার বলেন, ‘প্রতিবছর বেশ ভালো দামে আম বাগান বিক্রি করেন এখানকার কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় এবারও আমের উৎপাদন ভালো হয়েছে। আশা করছি, এবার কৃষক বেশ লাভবান হবেন।’ সাপাহার উপজেলার আম ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও ভালো ব্যবসার আশা করছি। তার আড়তে প্রায় ২৫ জন শ্রমিক কাজ করে থাকেন। আমের আমদানিও হয়ে থাকে প্রচুর। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমের বাম্পার ফলনে আম চাষিদের মুখে হাসি ফুটবে।’

সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনিরুজ্জামান বলেন, বরেন্দ্রভূমির সীমান্তবর্তী এ এলাকায় যথাযথ প্রচারের অভাব, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রযুক্তির ব্যবস্থা না থাকায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই এর দ্রুত সমস্যা নিরসনে স্থানীয় জনগণ ও আমচাষিদের ভাগ্য উন্নয়নে এ উপজেলায় একটি হিমাগার এবং একটি জুস ফ্যাক্টরি স্থাপনে ব্যক্তিগত অথবা সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন পাঠিয়েছেন। একই কথা বলেছেন পোরশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দীন শামীম। 

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, জেলার বরেন্দ্র অঞ্চলের উপজেলা সাপাহার ও পোরশায় চলতি বছর ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এসব উপজেলায় পাঁচ বছর ধরে হাইব্রিডসহ বিভিন্ন জাতের আম বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন কৃষকরা। এতে করে তাঁরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।