ছেলের ফল হাতে নিয়ে মায়ের কান্না থামছে না

Looks like you've blocked notifications!

দেয়াল লিখনগুলো এখনো মুছে যায়নি। মাথার ওপর বৈদ্যুতিক পাখাটিও রয়েছে ঠিকঠাক। পড়ার বই আর অঙ্কন সামগ্রীগুলো পড়ে রয়েছে টেবিলে। সবই আছে, নেই শুধু সাদিদ ফারজিন অর্ণব। ওর অনুপস্থিতিতে শহরের রাজারবাগানের বাড়িতে এখনো পাথরের মতো নীরবতা।

ছেলের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল হাতে নিয়ে মায়ের কান্না আর থামে না। ছেলের স্মৃতি বুকে আঁকড়ে ধরে কাটছে অর্ণবের মা মেহেরুন্নেসার দিন। আর বাবা ব্যাংক ম্যানেজার মো. জিল্লুর রহমান নির্বাক হয়ে গেছেন। ছোট ভাই জাভিদ ফারজিন আবির বড় ভাইকে হারিয়ে এখন বড়ই একা। ওর গিটারটায় হাত দিতেই ভেসে উঠছে ভাইয়ের স্মৃতি।

ছেলের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের কাগজ হাতে নিয়ে মা মেহেরুনের আর্তনাদ- ‘এই ফলাফল নিয়ে আমি কি করব।’  তিনি বলেন, ‘বাড়িতে যে যার কাজে ব্যস্ত। ভোর ৬টায় কাজের মেয়ের কাছ থেকে পানি নিয়ে এলো অর্ণব। এর মাত্র দুই ঘণ্টা পর সকাল ৮টার দিকে বৈদ্যুতিক পাখায় ছেলেকে ঝুলতে দেখি।’

অর্ণবের বাবা জিল্লুর রহমান জানান, আগের রাত আড়াইটার দিকে বইপত্র ও অঙ্কনের মধ্যে ডুবে ছিল অর্ণব। বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সাধ ছিল তার। দুদিন পর এসএসসির ফলাফল এসেছে হাতে। অর্ণব জিপিএ-৫ পেয়ে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছে। বিতার্কিক , পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়া মেধাবী ছাত্র অর্ণব  পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ত থাকত সব সময়। অনেক পুরস্কারও পেয়েছে সে।  

জানা যায়, একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের জের ধরে অভিমান করে গলায় মায়ের ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে অর্ণব। আত্মহত্যা নিয়ে নিজ কক্ষের দেয়ালে লিখেছে ‘আই কুইট’। লিখেছে- ‘আঁধারের সাথে যুঝিয়া আমার ফুরায়ে আসিছে তেল’। আইরিশ কবি ডব্লিউ বি ইয়েটসের ‘ডেথ’  কবিতার কয়েকটি লাইনও লিখে রেখে গেছে সে।

নিজের সব কথা  ‘সুইসাইড নোটে’  লিখে ই-মেইল করে বন্ধুদের কাছে পাঠিয়েছে অর্ণব। ‘আমার আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়। আমার ভুলের কারণেই আমার আত্মহনন। মৃত্যুর পর আমার দেহ যেন কাঁটাছেড়া না করা হয়।’

সাতক্ষীরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নজরুল ইসলাম  জানান,  কোনো অভিযোগ না থাকায় পোস্টমর্টেম ছাড়াই অর্ণবকে দাফনের অনুমতি দিয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। তবে অর্ণবের কিছু লেখা হাতে পাওয়া গেছে । তা নিয়ে তদন্ত চলছে।

সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিদ ফারজিন অর্ণব গত ৯ মে আত্মহত্যা করে।