ছেলেকে ফিরে পেতে বাবা-মায়ের আর্তনাদ
গুমের শিকার ছেলেকে ফেরত চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন পঞ্চগড় জেলা শহরের হকার রুহুল আমিন ও তাঁর স্ত্রী মিনারা বেগম। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল আমিন ও তাঁর স্ত্রী মিনারা বেগম জানান, ২০১২ সালের ৫ মার্চ ঢাকার ফার্মগেট এলাকা থেকে তাঁর ছেলে ইমাম হাসান বাদলকে (২৪) অপহরণ করা হয়। অপহরণের পরের দিন র্যাব ২-এর সদস্যরা অপহরণকারী জাহিদ ও বাবুলকে গ্রেপ্তার এবং বাদলকে উদ্ধার করে। অপহরণকারীদের সহযোগীরা এই বিষয়টি মুঠোফোনে তাঁদের জানায়।
রুহুল আমিন জানান, এরপর ১৩ মার্চ তিনি ঢাকায় র্যাব-২ কার্যালয়ে যান। র্যাবের পরামর্শে তিনি তেজগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি নম্বর : ৭৪০, তারিখ : ১৩ মার্চ ২০১২। এরপর র্যাব ২-এর দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু একটি আবেদনে স্বাক্ষর নিয়ে তাঁর কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন এবং টাকা লেনদেনের বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন। এ সময় রুহুল আমিন র্যাবের পোশাক পরা এসআই রাজুকে নগদ ৪০ হাজার টাকা দেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান।
রুহুল আমিন বলেন, বাকি টাকা দিতে না পারায় এসআই রাজু তাঁর ছেলেকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে র্যাব সদস্যরা তাঁর ছেলেকে উদ্ধার করেননি বলে দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল আমিন বলেন, ‘প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে ছেলের জন্য ঢাকার মানবাধিকার কমিশন, র্যাব ক্যাম্প, থানা, বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও পত্রিকা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছি। আজ পর্যন্ত ছেলের কোনো হদিস পাইনি। র্যাব আমার ছেলেকে গুম করেছে। সংসারের একমাত্র কর্মক্ষম ছেলেকে হারিয়ে আমরা অর্ধাহারে-অনাহারে দিনযাপন করছি। আমার আরেক ছেলে ইমাম হোসেন সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়ে বর্তমানে ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিসাধীন। আমি হকারি করে সংসার চালাতাম। বয়সের কারণে এখন আর পারি না।’ একপর্যায়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন রুহুল আমিন।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতেই কেঁদে ফেলেন গুমের শিকার বাদলের মা মিনারা বেগমও। তিনি বলেন, ‘ছেলের আয় দিয়েই আমাদের সংসার চলত। এখন আমরা একবেলাও ঠিকমতো খেতে পারি না। ছেলে ফেরত আসবে এই আশায় বুক বেঁধে বেঁচে আছি। এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে জেলার সব ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।