রিফাতের দাবি অসত্য, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন
নারায়ণগঞ্জের লাঞ্ছিত প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে অবমাননার অভিযোগের প্রমাণ পায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে ছাত্রের বক্তব্যের ভিত্তিতে বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেই শিক্ষার্থী রিফাত হাসান একেক সময় একেক কথা বলেছে। তার দাবি অসত্য বলে তারা প্রমাণ পেয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জমা পড়া তদন্ত প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নিয়েছিল। যে প্রক্রিয়ায় শ্যামল কান্তিকে বরখাস্ত করা হয়েছিল তা বিধি বহির্ভূত হওয়ায় ওই শিক্ষককে পুনর্বহাল করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের জানান, চারদফা সুপারিশসহ কমিটির ওই প্রতিবেদন হাতে এসেছে। আগামী ২৯ মে তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেওয়া হবে।
মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ‘ম্যানেজিং কমিটির সাথে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের পূর্ব থেকে একটা দ্বন্দ্ব বিরাজমান ছিল। সেখানে যে আর্থিক অনিয়ম আছে সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে তথ্য উদঘাটন করার জন্য তারা (শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি) সুপারিশ করেছে।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘ছাত্র রিফাত যে কমপ্লেইন করেছিল, তদন্ত কমিটি দেখেছে- ঘটনা অসত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ দোষীদের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল বুধবার একটি প্রতিবেদন রাষ্ট্রপক্ষের কাছে জমা দেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি)। একই সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পৃথক একটি প্রতিবেদন আজ রাষ্ট্রপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়। তবে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের পাঠানো প্রতিবেদনে কী উল্লেখ করা হয়েছে তা জানা যায়নি।
পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন— এমন অভিযোগ করে গত ১৩ মে শুক্রবার এলাকাবাসীর সামনে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্দেশে তাঁকে কান ধরে ওঠ-বস করানো হয়। সমবেত জনতার কাছে করজোড়ে মাফ চাইতেও বাধ্য করা হয় ওই প্রধান শিক্ষককে। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে প্রধান শিক্ষককে পুলিশের হেফাজতে স্কুল থেকে বের করা হয়। এরপর ওই শিক্ষককে স্কুল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটি।
এ ঘটনার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ওঠে সমালোচনার ঝড়। অনেকে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের হেফাজতে ইসলামের নেতা ও ব্যবসায়ী নেতারা শ্যামল কান্তি ভক্ত ধর্ম নিয়ে অবমাননা করেছেন দাবি করে তাঁর শাস্তির দাবি জানান।