খানজাহান আলী বিমানবন্দরের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লা গ্রামে হযরত খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। একই জমির ওপর দিয়ে আগে থেকেই মংলা-খুলনা রেললাইন স্থাপনের বিষয়টি নির্ধারণ হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে আগামী ৭ জুন রাজধানীর সচিবালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে বলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বাগেরহাটের ফয়লায় মংলা-খুলনা মহাসড়কের পাশে হযরত খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর পর এ প্রকল্পের জন্য ৯৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০১৫ সালের ৫ মে একনেকের সভায় খানজাহান আলী বিমানবন্দরের সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সংশোধিত প্রকল্পে জমির পরিমাণ আরো ৫৩৬ একর বাড়ে। এতে প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয় ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সংশোধিত প্রকল্প অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণ করতে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কাছে ৪৩ কোটি টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে যেসব জমি অধিগ্রহণ করা হবে তার উন্নয়ন ও মাটি ভরাট করতে ব্যয় হবে ৩০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। কোন কোন জমি অধিগ্রহণ করা হবে, দাগ নম্বর উল্লেখ করে এরই মধ্যে তার সমীক্ষার কাজও শেষ করেছে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন।
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানান, নতুন করে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। যে জমি নির্বাচন করা হয়েছে, এরই মধ্যে সেখান দিয়ে মংলা-খুলনা রেললাইন প্রকল্প নির্মাণের কথা। এ ছাড়া মংলা-খুলনা মহাসড়কের একাংশ নতুন সমীক্ষা হওয়ায় এলাকার মধ্যে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে বিমান মন্ত্রণালয় চাইছে, রেললাইন ও মহাসড়কের জমি বাদ দিয়ে সুবিধামতো জমি অধিগ্রহণ করতে। এতে আপত্তি জানিয়েছেন স্থানীয় এমপি তালুকদার আবদুল খালেক।
এ বিষয়ে আবদুল খালেক বলেন, ফয়লার উত্তর-পূর্ব এলাকায় বিমানবন্দরের জমি অধিগ্রহণের কথা। এখান থেকে সরে অন্য কোথাও থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হলে তাঁর পক্ষে সহযোগিতা করা সম্ভব হবে নয়।
বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রধান (পরিকল্পনা-১ শাখা) মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে দ্বিতীয় দফা জমি অধিগ্রহণের কাজ দ্রুত শুরু করতে পারি। সমস্যা সমাধানে আগামী ৭ জুন আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠক থেকেই সিদ্ধান্ত হবে, খানজাহান আলী বিমানবন্দরের জমি অধিগ্রহণ কোথা থেকে কীভাবে করা হবে। ওই সভায় উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সাংসদ তালুকদার আবদুল খালেক ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
হযরত খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্পের বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে—ইলেকট্রো মেকানিক্যালে ১৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা; ভবন নির্মাণে ১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা; এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং (এজিএল, সাত হাজার মিটার রানওয়ে ও ট্র্যাক নির্মাণে নয় কোটি ৫০ লাখ টাকা; সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে আট কোটি ৫০ লাখ টাকা; পানি সরবরাহ খাতে পাঁচ কোটি ১৭ লাখ টাকা; এক হাজার ও ৫০০ কেভির দুটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণে নয় কোটি ৭০ লাখ টাকা; পরামর্শক সেবা খাতে ছয় কোটি নয় লাখ টাকা; জ্বালানি পরিবহন খাতে তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা; অ্যাম্বুলেন্সসহ যানবাহন কিনতে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা; হ্যান্ড মেটাল ডিটেকটর, লিফট ও টেলিফোন ইত্যাদি কিনতে চার কোটি ১০ লাখ টাকা ও প্রকল্পের জনবল খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৭ লাখ টাকা।