আদালতের পর্যবেক্ষণ

‘শুধু ডাকাতি নয়, ঠান্ডা মাথায় হত্যা’

Looks like you've blocked notifications!

রাজধানীর উপকণ্ঠ আশুলিয়ার জামগড়া বাজারে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতি ও হত্যার ঘটনাকে শুধু ডাকাতি নয় বলে পর্যবেক্ষণে বলেছেন আদালত।

রায় ঘোষণার সময় ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আদালতের পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলেন, ‘এই ঘটনা শুধু প্রকাশ্যে দিনের আলোয় ডাকাতি ছিল না, বরং এটা ছিল সুপরিকল্পিতভাবে আটজন বেসামরিক নাগরিককে ঠান্ডা মাথায় হত্যা। এর মধ্যে চারজনকে ব্যাংক কার্যালয়ের মধ্যেই কোনো প্রকার উসকানি বা প্রতিরোধ ছাড়া হত্যা করা হয়েছে।’

বিচারক আরো বলেন, ‘আমি তাদের চেহারা, অভিব্যক্তিতে, আচরণে অনুশোচনার চিহ্ন দেখিনি। পরিস্থিতির চাপে পড়ে তারা এ ঘটনা ঘটায়নি। সে কারণে সমস্ত সাক্ষী-সাবুদ ও পরিপাঠ্য বিবেচনা করে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়াই উপযুক্ত মনে করছি। এ ছাড়া অমানবিক, নিষ্ঠুর কায়দায় আটজন নির্দোষ মানুষকে হত্যার জন্য একটি জরুরি নজির সৃষ্টি দরকার। অন্যদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনে এ রকম শাস্তি জরুরি।’

এর আগে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর উপকণ্ঠ আশুলিয়ার জামগড়া বাজারে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতি ও হত্যার ঘটনায় জেএমবি সদস্যসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।

ফাঁসির আসামিরা হলেন—বোরহানউদ্দিন, সাইফুল আলামিন, মিন্টু প্রধান, মো. জসীমউদ্দিন, মাহফুজুল ইসলাম সুমন ও পলাশ ওরফে সোহেল রানা।

যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন উকিল হাসান। তিন বছরের কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন বাবুল সরদার ও মোজাম্মেল হক। অন্যদিকে খালাস পেয়েছেন আবদুল বাতেন ও শাজাহান জমাদ্দার।

আসামিদের মধ্যে পলাশ পলাতক। অন্য ১০ জন কারাগারে আটক আছেন। তাঁদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

এ মামলায় ৬৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। মামলার আসামিদের মধ্যে বাবুল সরদার, মিন্টু প্রধান, উকিল হাসান ও শাজাহান জমাদ্দার বাদে অন্য সবাই জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ডাকাতদের গুলি ও চাপাতির আঘাতে ব্যাংক ম্যানেজার অলিউল্লাহসহ সাতজন ও আহত  একজনসহ আটজন নিহত হন। ডাকাতরা ছয় লাখ ৮৭ হাজার ১৯৩ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। মোটরসাইকেল দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার ধাওয়ায় আসামি বোরহানউদ্দিন ও সাইফুল নামের দুই ডাকাতকে হাতেনাতে ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে উপস্থিত জনতা।

গণপিটুনি দেওয়া ওই দুজনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বাবুল সরদার ও মিন্টু প্রধানকে আটক করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারের পর ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে আসামি বোরহানউদ্দিন, সাইফুল আলামিন, মিন্টু প্রধান, মো. জসীমউদ্দিন, মাহফুজুল ইসলাম সুমন ও পলাশ ওরফে সোহেল রানাসহ সাতজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

জবানবন্দিতে জঙ্গি অর্থায়নে তহবিল গঠনের জন্য এ ডাকাতি করা হয়েছে বলে তাঁরা জানান।

চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি এ মামলায় জেএমবি সদস্যসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আদালতে সরকারপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ঢাকা জেলার পিপি খন্দকার আবদুল মান্নান ও আসামিপক্ষে করেন অ্যাডভোকেট ফারুক আহম্মেদ।