হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ

Looks like you've blocked notifications!
প্রথাবিরোধী লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. হুমায়ুন আজাদ।

প্রথাবিরোধী লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

আজ রোববার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিনের আদালতে আইন মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত কর্মকর্তা এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এ কে এম এমদাদুল হক হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেন। তিনি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে বিচারক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় এ মামলার আসামি আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেছিলেন।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক আগামী ২৭ জুন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।

এ দিকে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শুরা সদস্য আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদকে। অন্যদিকে মামলার আসামি জেএমবি শুরা সদস্য সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু পলাতক।

এ ছাড়া ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুরে প্রিজনভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়া তিন জঙ্গির মধ্যে রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহমুদ ক্রসফায়ারে নিহত হন। গত ২৪ এপ্রিল হাফিজের মৃত্যুর প্রতিবেদন একই আদালতে দাখিল করা হয়। তাই তাঁকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর আগে এ মামলাটি ‘হত্যাচেষ্টা মামলা’ হিসেবে তদন্ত করেন তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু হামলার কিছু দিন পর জার্মানিতে মারা যান হুমায়ুন আজাদ। তার পরই ‘হত্যা মামলা’ হিসেবে এর অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রের আসামিরা হলেন জেএমবির শুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও হাফিজ মাহমুদ।

অভিযোপত্র থেকে বাদ যাওয়া অপর চার আসামি হলেন আবু আব্বাস ভুইঞা, গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তফা মাহমুদ, আব্দুল খালেক গবা ওরফে টাইগার ও শফিক উল্লাহ সাদ।

এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার আগেই অন্য একটি মামলায় ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় আসামি শায়খ আবদুর রহমান, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আওয়াল, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই এবং খালেদ সাইফুল্লাহর নামও মামলার অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়।

এ আসামিদের ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ ঝালকাঠির একটি বিচারক হত্যা মামলায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

অভিযোগ প্রমাণিত হলেও অভিযোগপত্র দাখিলের আগেই মারা যাওয়ায় জনৈক নুরুল্লাহ ওরফে হাফিজকেও মামলার অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

নথি থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন লেখক হুমায়ুন আজাদ। দুর্বৃত্তরা এ সময় তাঁকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে মাথায়, মুখে ও ঘাড়ের ওপর মারাত্মক জখম করে। ঘটনার পরদিন হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন।

এর আগে ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর জেএমবি নেতা শায়খ রহমান, আতাউর রহমান সানি, নুর মোহাম্মাদ সাবু ওরফে শামীম, মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার ওরফে ভাগ্নে শহিদকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিল পুলিশ।

সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে হুমায়ুন আজাদের ভাই ও এই মামলার বাদী মো. মঞ্জুর কবির ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর মামলাটির বর্ধিত তদন্তের আবেদন করলে ২০ অক্টোবর আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি হামলার শিকার হওয়ার পর ২২ দিন সিএমএইচ হাসপাতালে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসারত ছিলেন। স্কলারশিপ নিয়ে ২০০৪ সালের ৭ আগস্ট জার্মানি যান তিনি। ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট ড. হুমায়ুন আজাদ জার্মানির মিউনিখে মারা যান।

বিভিন্ন সময় মামলাটি তদন্ত করেছেন রমনা থানার উপপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান, সিআইডির পরিদর্শক কাজী আবদুল মালেক, মোস্তাফিজুর রহমান ও লুৎফর রহমান।

২০১০ সালের ১৮ অক্টোবর আসামি আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এ মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে পাঁচ দফায় ১২ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে শেষ পর্যন্ত এ মামলার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অব্যাহতি দেওয়া হয়।