বিদেশ নয়, ঠাঁই হলো বার্ন ইউনিটে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। এখানে পর্যবেক্ষণকক্ষে চিকিৎসা চলছে মানিকগঞ্জের রাশেদুল ইসলামের। শরীরের ৮০ শতাংশই পুড়ে গেছে তাঁর। ভেতরে যেতেই শোনা গেল, ‘আপা, আপা, আমার ফ্লাইট বুধবার দুপুরে। পাসপোর্টটা কোথায়?’
কাতারে যাওয়ার কথা ছিল রাশেদের। কালকের ফ্লাইট ধরতে হরতাল উপেক্ষা করেই কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিলেন চাচা মোহাম্মদ হানিফ। তিনিও দগ্ধ হয়েছেন, তবে আশঙ্কামুক্ত।
হানিফ বলেন, ‘ভাতিজাকে প্লেনে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। কিন্তু মাঝপথে সব এলোমেলো হয়ে গেল।’ তিনি জানান, গ্রামের জমি বন্ধক রেখে কাতারে যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করেন রাশেদ। এ জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
এদিকে, বুধবার ভিসার জন্য সৌদি আরবের দূতাবাসে লাইনে দাঁড়ানোর কথা ছিল মানিকগঞ্জের জিলকদের। কুমিল্লার দাউদকান্দিতে পেট্রলবোমায় তার ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
সৌদি আরবে যাওয়ার আগে চার বন্ধু বেড়াতে গিয়েছিলেন কক্সবাজারে। দাউদকান্দিতে দগ্ধ হন জিলকদ ও শরীফ। এর মধ্যে শরীফ আশঙ্কামুক্ত।
ঘটনা সম্পর্কে শরীফ জানান, হানিফ পরিবহনের বাসের টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু তারা আইকন পরিবহনের বাসে ফেরার ব্যবস্থা করে দেয়। চৌদ্দগ্রামে রাত সাড়ে ৩টার দিকে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারা হয় বাসে। এ সময় বাসের অনেকেই ঘুমিয়ে ছিলেন। বোমা মারার সঙ্গে সঙ্গে গ্লাস ফেটে যায়। ঘুম ভাঙার পরপরই ফারুক, শরীফ ও আলী হোসেন বাস থেকে বের হতে সক্ষম হন। কিছুক্ষণ পর জিলকদকে রাস্তার পাশে পাওয়া যায়। তাঁর গায়ে আগুন জ্বলছিল। তাঁরা সবাই একযোগে আগুন নেভান। এর এক ঘণ্টা পর অ্যাম্বুলেন্স এসে তাঁদের কুমিল্লা মেডিকেলে নেয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে।
জিলকদের বাবা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘একমাত্র ছেলের ভিসার কাজের জন্য আমি ঢাকায় এসেছি। রাশেদের সৌদি আরবে যাওয়ার সব প্রক্রিয়া শেষ। বুধবার ভিসার জন্য দূতাবাসে দাঁড়ানোর কথা ছিল। ভিসা পেলেই সৌদি আরব যাবে।’