উত্তরাঞ্চলে ঝড়ে নিহত ১২
উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় কালবৈশাখী ঝড় ও ঝড়ের সময় বজ্রপাতে ১২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বগুড়ায় পাঁচজন, রাজশাহীতে চারজন এবং পাবনা, নওগাঁ ও নাটোরে একজন করে নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো অনেকেই। এ ছাড়া ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। আজ শনিবার বিকেলে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট থানা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হতাহতের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
মোহাম্মদ আতিকুর রহমান সোহাগ, বগুড়া : সদর, ধুনট ও শাহজাহানপুর উপজেলায় ঝড়ের সময় দেয়ালচাপা, গাছচাপা ও বজ্রপাতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সদর ও শাহজাহানপুরে দুজন করে মোট চারজন এবং ধুনটে একজন মারা গেছেন।
বগুড়া শহরের শারমিন ক্লিনিকের চিকিৎসক শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান আলী এনটিভি অনলাইনকে জানান, বিকেলে ঝড়ের সময় শহরের বউবাজার এলাকায় দেয়ালচাপায় হানুফা (৩৮) ও আড়াই মাসের শিশু বেবী আহত হয়। তাদের ক্লিনিকে নিয়ে আসা হলে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এ ছাড়া শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান স্থানীয়দের বরাত দিয়ে এনটিভি অনলাইনকে জানান, গাছের ডাল ভেঙে উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের মাঠাপাড়া গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে আবদুল মান্নান (৫০) এবং ঘরের চাল ধসে রাবেয়া বেওয়া (৪০) নামে এক নারী মারা গেছেন।
ওসি আরো জানান, ঝড়ের কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শত শত ঘববাড়ি ও দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে গাছ পড়ে উপজেলার সাথে বিভিন্ন স্থানে সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, উপজেলার চিকলি ইউনিয়নের জোড়শিমুল গ্রামে ঝড়ের সময় ঘরের দরজার আঘাতে আফজাল হোসেন (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি এই গ্রামের মৃত ফয়েজ হোসেনের ছেলে।
শ ম সাজু, রাজশাহী : রাজশাহীতে চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বাঘা উপজেলায় দুজন এবং পবা ও গোদাগাড়ী উপজেলায় একজন করে নিহত হয়েছেন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের নজু মণ্ডলের স্ত্রী ষাটোর্ধ্ব জাহানারা বেগম, কিশোবপুর গ্রামের আরশাদ আলীর ছেলে ইমাজ উদ্দিন (৪৫), পবা উপজেলার বড়গাছির আবুল হোসেন (৪০) এবং গোদাগাড়ী উপজেলার চর আশারিয়া গ্রামের মৃত খালেক ঘোষের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৬৫)।
রাজশাহীতে মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আজ শনিবার বিকেল ৫টার দিকে কালবৈশাখী আঘাত হানে। ঘণ্টায় ৭০-৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পাশাপাশি বজ্রবৃষ্টি হয় বলে এনটিভি অনলাইনকে জানান রাজশাহী আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র। তিনি জানান, এ সময় ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অনুপম এনটিভি অনলাইনকে জানান, ঝড়ের সময় বাড়ির দেয়াল ধসে আহত হন জাহানারা বেগম। অপরদিকে পদ্মা নদীতে মাছ ধরে ফেরার পথে মাটিচাপা পড়েন জেলে ইমাজ উদ্দিন। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়।
অপরদিকে ঝড়ের সময় বজ্রপাতে বড়গাছি এলাকার আবুল হোসেনের নিহতের খবর এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান।
এদিকে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ এনটিভি অনলাইনকে জানান, ঝড়ের সময় মনোয়ারা মাটির ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে নিহত হন।
রাজশাহীর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানায়, ঝড়ের পর মহানগরীর ভদ্রা, সাগরপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ওপর গাছ পড়ে গেছে। বর্তমানে ভাঙা গাছ ও ডালপালা সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী শাহিনুল ইসলাম শাহিন জানান, ঝড়ের পর বিভিন্ন জায়গা থেকে বিদ্যুতের খুঁটির ওপর গাছ পড়ে যাওয়ার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। মেরামতের জন্য এরই মধ্যে সেখানে লোক পাঠানো শুরু হয়েছে।
ঝড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগরীর সাহেববাজার, গোরহাঙ্গা রেলগেট, নওদাপাড়া, বায়া, বিমানবন্দর থানার মোড়, শালবাগান এবং লক্ষ্মীপুর এলাকার রাস্তার পাশের বিভিন্ন গাছপালা ও সাইনবোর্ড রাস্তায় পড়ে গেছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তার পাশের ছোট ছোট অস্থায়ী দোকান।
মহানগরীর বাইরে তানোর, পবা, পুঠিয়া, বাগমারা, বাঘা ও মোহনপুর উপজেলায় কালবৈশাখীতে আম, লিচুবাগান ও পানের বরজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিনের চালা উড়ে গেছে। লণ্ডভণ্ড হয়েছে অনেক কাঁচা বাড়িঘর।
এ কে এম ফজলুর রহমান, পাবনা : শহরের চাঁদমারী এলাকায় ঝড়ে গাছের নিচে চাপা পড়ে জান উদ্দিন (৫০) নামে এক চা বিক্রেতার মৃত্যু হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসানুল হক এনটিভি অনলাইনকে জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঝড়ের সময় দোকানের পাশে থাকা বটগাছ উপড়ে দোকানের ওপর পড়ে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
আসাদুর রহমান জয়, নওগাঁ : ঝড়ের সময় মান্দা উপজেলার মহানগর নামক এলাকায় দেয়ালচাপায় শাহানাজ বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক এনটিভি অনলাইনকে জানান, ঝড়ে জেলার ঘড়বাড়ি, গাছপালাসহ ফসলিজমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলার উপজেলাগুলোতে কালবৈশাখী ঝড়ে প্রায় ২০ জন আহত হন, এদের মধ্যে ১০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মো. হালিম খান, নাটোর : গুরুদাসপুরে কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বজ্রপাতে খোকন (৩৭) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার পিপলা গ্রামে শনিবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইব্রাহীম এনটিভি অনলাইনকে জানান, সন্ধ্যায় ঝড় শুরু হলে খোকন মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।