কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদনের রায় কাল
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদনের রায় ঘোষণা করা হবে আগামীকাল সোমবার।
আজ রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ তারিখ নির্ধারণ করেন।
বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
শুনানিতে অংশ নিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সোহাগপুরের গণহত্যার যে অভিযোগে আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন, সেই অভিযোগে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া তিনজন নারীর সাক্ষ্যে বৈপরীত্য রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁদের বয়স দুই থেকে পাঁচ বছর ছিল। কাজেই তাঁরা প্রত্যক্ষ সাক্ষী হতে পারে না। তাই তাঁদের সাক্ষীর ওপর ভিত্তি না করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমানোর আবেদন করেন তিনি। এমনকি বিশ্বে যখন মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি দেওয়া কমে আসছে বা অনেক দেশ তা সমর্থন করে না, তখন এ দেশেও তা বিবেচনার যোগ্য।’
তবে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিপক্ষের সকল যুক্তির বিরোধিতা করে বলেন, ‘কামারুজ্জামান আলবদর নেতা ছিলেন, তাঁর নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে সোহাগপুরের গণহত্যা হয়েছে, যা ট্রাইব্যুনাল এবং আপিল বিভাগে প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই এই অপরাধে তাঁর শাস্তি কমার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি তাঁরা এও বলেছেন, একটি প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আইন হয়েছে। যে আইনে বিচার চলছে। কাজেই অন্যান্য দেশে কী হলো তা বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়।’
শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এটার নির্দেশনা, পরিচালনা এবং সংশ্লিষ্টতা কামারুজ্জামানের ছিল। সুতরাং তাঁকে কোনো রকম অনুকম্পা দেখানোর কোনো অবকাশ নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘শাস্তি প্রদানের যে মান এটা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের হয় এবং এটার কিছু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে।
আমরা যদি আজকে এই যুদ্ধাপরাধীদের সম্বন্ধে অনুকম্পা দেখাই, তাহলে আমরা কিন্তু ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে যাব।’
শুনানি শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যুক্তি উপস্থাপন করেছি, নতুন দৃষ্টান্ত দিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আশা প্রকাশ করি যে, মহামান্য আপিল বিভাগ আমাদের যুক্তিগুলো বিবেচনায় নেবেন এবং বিবেচনায় নিয়ে কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদনটি মঞ্জুর (অ্যালাউ) করবেন।’
সকাল পৌনে ১০টায় শুরু হয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত একটানা চলে শুনানি। এরপর আধা ঘণ্টার বিরতি দিয়ে সাড়ে ১১টার দিকে আবার শুনানি শুরু হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে।