সাতক্ষীরার সড়কে রিকশা নেই, দুর্ভোগ

Looks like you've blocked notifications!
রিকশাভ্যানে চলাচল করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ছবি : এনটিভি

সাতক্ষীরা শহরে কোনো রিকশা চলছে না। মোটরসাইকেলও প্রায় অদৃশ্য হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ব্যাটারিচালিত ভ্যান, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ও ইজিবাইকসহ অন্য যেসব যানবাহন চলাচল করত তাও পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে।

 

সড়কে যানবাহন না পেয়ে রোজার দিনে সাধারণ মানুষও অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। নারী-শিশু ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, অবৈধ যানবাহন ব্যবহারের ফলে সাতক্ষীরায় বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে এবং এতে প্রতিনিয়ত হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ যানবাহন ব্যবহার করে সন্ত্রাস ও খুনের ঘটনা ঘটছে। এসব বিবেচনা করে সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না।

প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে জানা গেছে, জেলার বর্তমান জনসংখ্যা ২২ লাখের কিছু বেশি। এর মধ্যে সাতক্ষীরা পৌরসভায় জনসংখ্যা দেড় লাখ। পৌরসভায় ৩২ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। জেলায় মোট সড়কের দৈর্ঘ্য কাঁচা-পাকা মিলে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার। এখানে আছে স্থলবন্দর, সুন্দরবন। চিংড়ি, কাঁকড়া ও হিমায়িত মাছের উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম চলে। জেলায় দেড় লাখ নিবন্ধিত মোটরসাইকেল চলাচল করে।

জানা গেছে, বৈধ যানবাহন হিসেবে বাস মিনিবাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের পাশাপাশি শহরে রিকশা চলাচল করত। এর মধ্যে সড়কে নামে তিন চাকার ঠেলা ভ্যান। নতুন করে যুক্ত হয় ইজিবাইক ও মাহেন্দ্র। এ ছাড়া নছিমন, করিমন, আলমসাধু ছাড়া থ্রি হুইলার চলাচল করে। জেলার ২২ লাখ মানুষ এতদিন এসব যানবাহন ব্যবহার করেছে।

জেলা প্রশাসক জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন হতাহত হচ্ছেন। এটা বিবেচনা করে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী দুজনের মাথায় হেলমেট বাধ্যতামূলক। ফুলহাতা শার্ট, জুতার পাশাপাশি ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গাড়ির সব কাগজপত্রের মূলকপি সঙ্গে থাকতে হবে। গাড়িতে চালকসহ দুজনের বেশি নয় এবং সাত বছরের নিচের শিশুকে তোলা যাবে না। এ জন্য পুলিশ বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল আটক করেছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।

এদিকে ব্যাটারিচালিত ভ্যানের ব্যাটারি ও ইঞ্জিনভ্যানের ইঞ্জিন পুলিশ খুলে নিচ্ছে। তা ছাড়া নছিমন-করিমনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বহু ইজিবাইকও আটক করা হয়েছে। এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে।

ভুক্তভোগীরার অভিযোগ করছেন, যান চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করে পুলিশ নগদ টাকা আদায় করছে। শহরে এখন কেবলই নজরে আসছে তিন চাকার রিকশাভ্যান। ব্যাটারিযুক্ত ভ্যানচালকরা জানান, তাঁরা ধার-দেনা করে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে ভ্যানে ব্যাটারি বসিয়েছেন। আয় থেকে দায় শোধ হিসেবে প্রতি সপ্তাহে এক হাজার টাকা কিস্তি শোধের নিয়ম ভঙ্গ হওয়ায় তারা চাপের মুখে রয়েছেন। তাঁরা বলছেন, তাঁদের ঘরে চুলা জ্বলছে না।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, তাঁদের দু-তিনগুণ ভাড়া দিয়ে ভ্যানে চলাচল করতে হচ্ছে। তাঁদের মতে, এ সংকট কাটিয়ে সড়কে জনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ লক্ষ্যে তাঁরা শহরে সিটি বাস চালুর দাবি জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে মোটরসাইকেলে চালকসহ তিনজন আরোহী রাখার নিয়ম চালু করতে হবে। এ ছাড়া সহজ শর্তে স্বল্পতম সময়ে গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ করতে হবে।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেন, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে পথচারীদের সুবিধার্থে সড়কে বিকল্প বৈধ যানবাহন চালুর বিষয় নিয়ে প্রশাসন ভাবছে বলে জানান তিনি।