‘ভেবেছিলাম রাতের বেলাটা অন্তত নিরাপদ’
‘হরতাল-অবরোধে দিনের বেলায় জ্বালাও-পোড়াও হয়। ভেবেছিলাম রাতের বেলাটা অন্তত নিরাপদ। তাই সন্তান আর স্ত্রীকে রাতের বেলায় আসতে বলি। কিন্তু গভীর রাতেও বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারা হবে তা বুঝতে পারেনি।’
স্ত্রী আর সন্তানের লাশের সামনে বসে অপলক চোখে কথাগুলো বলছিলেন নরসিংদীর ব্যবসায়ী মানিক মিয়া। তাঁর চোখ দিয়ে অবিরত পানি পড়ছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই সাতজন নিহত হয়। নিহতদের তালিকায় আছে মানিক মিয়ার স্ত্রী আসমা বেগম (৩৫) আর তাঁর ছোট ছেলে শান্ত মজুমদারের (১৩) নাম। মানিক মিয়ার বড় ছেলে মুন্না মজুমদারও (১৪) একই বাসে ছিল। সেও আহত হয়েছে।
মানিক মিয়া পরিবার নিয়ে থাকেন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ভাড়ারিয়া পাড়ায়। তিনি এখানেই কাপড়ের ব্যবসা করেন। স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। গত শুক্রবার আসমা বেগম ও দুই ছেলে শান্ত ও মুন্না মজুমদার চট্টগ্রামে তাদের দাদার বাড়ি বেড়াতে যায়। সোমবার রাত ১২টায় তারা নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা দেয়। কিন্তু তাদের আর বাসায় ফেরা হয়নি।
রাতেই মানিক মিয়া ছুটে যান কুমিল্লায়। কিন্তু অনেক লাশের মাঝে প্রথমে তিনি স্ত্রী-সন্তানের লাশ শনাক্ত করতে পারেননি। চিকিৎসকদের সহযোগিতায় বেলা ১১টায় ছোট ছেলে শান্ত মজুমদারের ও বিকেল ৪টায় আসমা বেগমের মৃতদেহ শনাক্ত করেন মানিক মিয়া। আহত মুন্নাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কান্না কেবল মানিক মিয়ার পরিবারে সীমিত ছিল না। স্বজন আর প্রতিবেশীদের শোকে ভারী হয়ে গেছে ভাড়ারিয়াপাড়া। মা ও ছেলের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছে পুরো এলাকা।
আসমা বেগমের বোন হোসনে আরা আক্তার এনটিভিকে বলেন, ‘প্রতিদিনই টেলিভিশনের পর্দায় আগুনে পোড়া মুখ দেখি। কিন্তু কখনো ভাবিনি এই আগুনে পুড়বে আমার বোন-ভাগ্নে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’