কৃষকদের নাম ভাঙাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা!

Looks like you've blocked notifications!
ঝিনাইদহে কৃষকদের নামে সরকারি গুদামে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে। ছবি : এনটিভি

ঝিনাইদহের সরকারি খাদ্যগুদামে কৃষকদের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসায়ীরা ধান বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, এর সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারাও জড়িত। 

জেলার ধান ক্রয় কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুধাংশু হাওলাদার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান কেনার খবরটি আংশিক সত্য বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, কৃষি কার্ড ও  কৃষি বিভাগের করা তালিকায় নাম থাকলেই সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। তবে তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত ধান নেই।   

জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীনের বিরুদ্ধে কৃষি কার্ড ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তালিকাভুক্ত চাষিদের নামের স্লিপ দিচ্ছেন ব্যবসায়ীকে। 

হরিণাকুণ্ডু খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহুরুল আলম জানান, তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্লিপ ছাড়া ধান কিনছেন না। 

উপজেলার ফলশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলু মালিথা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্লিপ বাণিজ্য করছেন। প্রতি টনে দুই হাজার করে টাকা নিচ্ছেন তিনি। 

একই অভিযোগ করেছেন একই উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা,  জোড়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা পলাশ ও ভায়না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাসেলসহ শতাধিক কৃষক। তাঁরা অভিযোগ করেন, কৃষকদের নামে স্লিপ (কৃষি কার্ড) দেওয়া হলেও গুদামে ধান বিক্রি করছে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট।  

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনছেন না খাদ্যগুদামের কর্মকর্তারা। ধান কেনায় চরম অনিয়ম হচ্ছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে স্থানীয় কৃষি অফিসের লোকজন ও সরকারি দলের অনুসারীদের অনেকে জড়িত রয়েছে। 

জেলা খাদ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকার প্রান্তিক ও বরগা কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনছে। বোরো ধান প্রতি কেজি ২৩ টাকা দরে, অর্থাৎ প্রতি মণ ৯২০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে। সরকারি খাদ্যগুদামে এ দামে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারবেন। 

জেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় বোরো ধান উৎপাদন করা হয়েছে দুই লাখ ৬৭ হাজার টন। ছয় উপজেলা থেকে ধান কেনা হবে নয় হাজার ৬৮৬ টন। গত শুক্র ও শনিবার ধান কেনা বন্ধ ছিল। এ পর্যন্ত কেনা হয়েছে তিন হাজার ৪৫১ টন। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা থেকে এক হাজার ২৯৪ টন, হরিণাকুণ্ডু ২৪৯ টন, কালীগঞ্জ ৭৪৫ টন, মহেশপুর ৫৪০ টন,  কোটচাঁদপুর  ৩৩২ টন ও শৈলকূপা উপজেলা থেকে ৩৯১ টন ধান কেনা হয়েছে। 

গত ৫ মে থেকে সারা দেশে সরকারি দামে ধান কেনার কথা থাকলেও ঝিনাইদহ জেলায় দেরিতে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কেনা হবে এ ধান।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে খোলাবাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৬৭০ টাকা দরে। তবে সব কৃষকের ঘরে এখন ধানের মজুদ নেই। মৌসুমের শুরুতেই বেশির ভাগ প্রান্তিক ও বর্গা কৃষক ধান বিক্রি করেছেন। ওই সময় ব্যবসায়ীদের অনেকে কম মূল্যে ধান কেনেন, যা এখন উচ্চ মূল্যে সরকারি খাদ্যগুদামগুলোতে বিক্রি করছে। 

কয়েকটি সরকারি খাদ্যগুদামে গেলে দেখা যায়, গুদাম এলাকার ভেতরে-বাইরে লাইন দিয়ে ধান বোঝাই নছিমন, করিমন দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাড়িগুলোতে এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর ধান রয়েছে বলে জানা যায়। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাষিদের নামে বরাদ্দ দেওয়া কৃষি কার্ড ৫০০ টাকা করে কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। এখন সেই স্লিপের মাধ্যমে সরকারি গুদামে ৯২০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করছেন তাঁরা। 

এ বিষয়ে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, কৃষি বিভাগের করা তালিকা অনুযায়ী গ্রামে গ্রামে খোঁজ করা হয়েছে। বেশির ভাগ চাষির ঘরে ধান নেই। 

গত ২০ জুন শেষ হয়েছে গম কেনা। অভিযোগ রয়েছে গম কেনার সময় একইভাবে কৃষকদের বঞ্চিত করা হয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে চার হাজার ২৭ টন গম কেনা হয়। তবে লক্ষ্য নির্ধারণ ছিল তিন হাজার ৮১৭ টন।