খুলনায় সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালুর মৃত্যুবার্ষিকী পালন
খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক জন্মভূমির সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বালুর ১২তম মৃত্যুবাষিকী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে।
খুলনা প্রেসক্লাব, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন, হুমায়ুন কবীর বালু স্মৃতি পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন এসব কর্মসূচি পালন করছে।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে স্থাপিত স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ক্লাব প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেসক্লাব সভাপতি এস এম নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ওয়াদুদুর রহমান পান্না, অধ্যক্ষ আলী আহমেদ, শেখ আবু হাসান, এস এম জাহিদ হোসেন, শেখ দিদারুল আলম।
এর আগে রোববার রাতে দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকায় কর্মরত কমীরা হুমায়ুন কবীর বালুর প্রতিকৃতিতে ফুলের মালা অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
২০০৪ সালের ২৭ জুন নিজ পত্রিকা অফিসের সামনে চরমপন্থীদের বোমা হামলায় নিহত হন বালু। হত্যাকাণ্ডের পরদিন খুলনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মারুফ বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক ধারায় দুটি মামলা করেন। এ ছাড়া একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা বদল শেষে হত্যা মামলায় ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়।
অভিযোগপত্রভুক্তদের মধ্যে চারজন—বিডিআর আলতাফ, রিপন আহমেদ ওরফে সোয়েব, সুমন ওরফে শরিফুজ্জামান ও শ্যামল ওরফে দিদার ক্রসফায়ারে মারা যাওয়ায় আদালত তাঁদের নাম বাদ দিয়ে সাতজনের নামে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন।
মামলাটি ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর দ্রুত বিচার আদালতে পাঠানো হয়। ২০০৬ সালের ৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।
সর্বশেষ ২০০৭ সালের ১২ অক্টোবর গোয়েন্দা পরিদর্শক চিত্তরঞ্জন পাল সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। বিভিন্ন কার্যদিবসে আদালত ৩৬ জনের মধ্যে ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষ্য-প্রমাণে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক খুলনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আ. সালাম সিকদার ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সবাইকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
বিচারক তাঁর পর্যালোচনায় উল্লেখ করেন, কোনো সাক্ষীই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেননি। উপরন্তু সাংবাদিক বালুর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যাদের সাক্ষী হিসেবে ডাকা হয়েছিল, তারা কেউই সাক্ষ্য দেয়নি। এমনকি আদালত থেকে সমন জারি করেও সাক্ষীদের আনা যায়নি। তদন্তে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল এবং যাদের জিজ্ঞাসাবাদ বা সাক্ষী করা প্রযোজন ছিল; তা করা হয়নি বলেও আদালত অভিমত দেন।
হত্যা মামলায় কেউই অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত এবং সাজা না পাওয়ায় বালুর স্বজন ও সহকর্মীরা খুবই স্বাভাবিকভাবে ক্ষুব্ধ হন। মামলাটি আবারও তদন্তের দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২০ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এনামুল হক হত্যা মামলার দুর্বল দিকগুলো উল্লেখ করে বিস্ফোরক মামলাটি আরও তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন জানান। আদালত আবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য আদেশ দেন। বিস্ময়কর হচ্ছে, সাত বছর ধরে তদন্ত করে অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি হত্যা মামলার সেই সাত আসামিকে রেখেই ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। সেই থেকে নথিটি সেই মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পড়ে রয়েছে। গত ছয় মাসেও তা বিচারিক আদালতে প্রেরণ করা হয়নি।