গুলশান হামলায় আটক ২ : পুলিশ
রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
আজ সোমবার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘গুলশান হামলার ঘটনায় দুজন আটক আছে। সুস্থ হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া হামলার ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
এদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘দুজন গুলিবিদ্ধ, তারা যখন ওই খান থেকে আসতেছিল তাদেরকেও আমরা নিয়ে এসেছি। তাদের একজন ইউনাইটেড হাসপাতালে আমাদের পুলিশ কাস্টডিতে চিকিৎসাধীন আছে। আরেকজন আমাদের গভীর সন্দেহভাজন, ডিবিতে ছিল, গতকাল তাঁকে আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসায় নিয়ে গেছি। সুস্থ হলেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
আজ সোমবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার স্মরণে শোকসভায় পুলিশপ্রধান এবং ঢাকা পুলিশের প্রধান এ কথা বলেন।
গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর সেকশনের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সেখানে তারা দেশি-বিদেশিদের জিম্মি করে রাখে। সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে রাতেই নিহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান এবং গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম। এ ছাড়া এ সময় আহত হন অর্ধশতাধিক পুলিশের সদস্য।
পরদিন শনিবার সকালে জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। অভিযান শেষে ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গুলশানের হলি আর্টিজান থেকে ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের সবাইকে গত শুক্রবার রাতেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়। অভিযানে সাত সন্ত্রাসীর মধ্যে ছয়জন নিহত হয়।
নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি, যাদের মধ্যে একজনের যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিকত্ব ছিল।
আজ দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল করিম ও সালাহউদ্দিন খান স্মরণে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয় বলে বার্তা সংস্থা বাসসের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ডিএমপি আয়োজিত ও শোকসভায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন খোদ বাহিনীপ্রধান এ কে এম শহিদুল হক।
শোকসভায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান, পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারী, সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি হেমায়েত হোসেনসহ সব অতিরিক্ত আইজিপি, ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ডিএমপির বিভিন্ন বিভাগ, জোন ও থানার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শোকসভায় আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি যখন গুলশানে যাই, তখন ডিএমপি কমিশনার বললেন, স্যার আপনি আসবেন না। এখানে (গুলশান) যুদ্ধাবস্থা। আপনি থানায় যান। আমি গুলশান থানায় ফিরে আসি। কিন্তু থানায় বড় ওয়ারলেস সিস্টেম না পেয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে চলে যাই।’
‘সেখানে গিয়ে শুনি সালাহউদ্দিন মারা গেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে জানালাম। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন রবিউলসহ অন্য সবাইকে সামরিক হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। কথার ফাঁকেই শুনি রবিউলও মারা গেছেন। ওই সময় নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। অভিভাবক হিসেবে সন্তানের মৃত্যু দেখা সত্যি কষ্টকর।’
এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে আইজিপি বলেন, ‘যত দিন বেঁচে থাকব ততদিন অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে রবিউল ও সালাহউদ্দিনের পরিবারের পাশে থাকবে পুরো পুলিশ বাহিনী।’
শহীদুল হক আরো বলেন, রেস্তোরাঁটিতে হামলার পরই ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ১৩ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
জঙ্গি নির্মূল করতে পুলিশ বদ্ধপরিকর। তবে এটি পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার পক্ষে রোধ করা সম্ভব নয়। জঙ্গিবাদ নির্মূলে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান পুলিশপ্রধান।
ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘আমি ডিএমপি কমিশনার হিসেবে নয়, পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান হিসেবে নয়, একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে বলতে চাই আমরা এসি রবিউল ও ওসি সালাহউদ্দিনের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।’
হামলাকারীদের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘কারা কোনদিন মিসিং (নিখোঁজ) হয়েছে, কারা কোনদিন পোস্ট (ফেসবুক স্ট্যাটাস) দিয়েছে, কেন মিসিং (নিখোঁজ) হয়েছে, সবই আমরা খুঁজে বের করব। আর ছাড় নয়। প্রতিটা মুহূর্ত আমাদের এখন চ্যালেঞ্জের। ইমানি শক্তি পুলিশের অনেক প্রবল। আমরা সাহসিকতার সঙ্গে সব মোকাবিলা করব।’
কমিশনার আরো বলেন, ‘রবিউল তাঁর পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। সালাহউদ্দিনের পরিবারেরও একই অবস্থা। এটা আমাদের ভাবতে হবে। তাদের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার রয়েছে।’