ঝিনাইদহের সেই বাড়ির মালিক ও ইমাম হঠাৎ দৌঁড়াচ্ছিল!
ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ায় আলোচিত সেই বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য কাওছার আলী ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম রোকনুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আজ বুধবার বিকেলে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ধীরেন্দ্র নাথ সরকার। তিনি জানিয়েছেন, র্যাব ঝিনাইদহ ক্যাম্প তাদের ৩৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে থানায় হস্তান্তর করে।
এদিকে র্যাব-৬ ঝিনাইদহ ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মনির আহম্মেদ মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের জানান, ২৬ জুলাই মঙ্গলবার ভোরে জেলা শহরের পাগলাকানাই মোড়ে টহল চলার সময় র্যাব সদস্যরা দুজন লোককে হঠাৎ দৌঁড়ে চলে যেতে দেখেন। তখন তাঁদের সন্দেহ হয়। তাঁদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নাম ঠিকানা জানার সময় কথাবার্তা অসংলগ্ন এবং ধারাবাহিকতা না থাকায় সন্দেহ আরো ঘণীভূত হয়। তখন তাঁদের ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়।
র্যাব কমান্ডার আরো বলেন, ক্যাম্পে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখা যায় যে সোনালীপাড়ার যে মেসে গত কয়েক দিন ধরে শুনছিলাম যে গুলশান হামলার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন থাকতেন এবং ছিল। এরা সেই মেসের মালিক এবং পাশের মসজিদের ইমাম।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘তখন তাঁরাও (বাড়ির মালিক ও মসজিদের ইমাম) স্বীকার করে যে গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার সঙ্গে জড়িত দুজন (নিব্রাস ইসলাম ও আবির রহমান) এখানে ছিল বলে তাঁরাও মত প্রকাশ করেন। সেই হিসেবে পরবর্তী সময়ে আরো কিছু কথাবার্তা জিজ্ঞাসাবাদ করে অধিকতর তদন্তের জন্য সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানান তিনি।
গত ৬ জুলাই ঈদুল ফিতরের আগের রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাওছার আলী ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম রোকনুজ্জামানসহ পাঁচজনকে ধরে নিয়ে যায় বলে দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা। এ ব্যাপারে পরে বক্তব্য জানতে চাইলে মেজর মনির আহম্মেদ স্পষ্ট করে বলেন, ‘এখানে সরকারের অন্যান্য সংস্থা কাজ করে। কেউ যদি নিয়ে থাকে, তা আমাদের নলেজে নেই।’
এদিকে ঝিনাইদহের পুলিশ ঘটনার প্রথম থেকেই দাবি করে আসছিল, এখানে জঙ্গিদের কোনো আস্তানা নেই। এমনকি গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গি নিব্রাস ও শোলাকিয়ায় নিহত আবির জেলা শহরের সোনালীপাড়ার ওই বাড়িতে ছিল এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করা হয়।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) গোপীনাথ কানজি লাল আবার বলেছেন, সোনালীপাড়ার আলোচিত ওই বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ছিল- এমন তথ্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়েছে। এতে ভুল তথ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর পুরোহিত আনন্দ গোপাল, সেবায়েত শ্যামানন্দসহ চার খুন মামলার মোড় অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ বলেছেন, আটক কাওছার আলী ও রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ করা হয়নি। পৌরসভা (মিউনিসিপ্যাল) এলাকার জন্য করা পুলিশ আইনের ৩৪ ধারায় র্যাব তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।
এদিকে সোনালীপাড়ার আলোচিত সেই বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য কাওছার আলী আজ বুধবার দুপুরে সদর থানায় থাকাবস্থায় আতঙ্কিত চোখে বলেন, ঈদের আগের দিন রাতে তাঁর দুই ছেলে বিনছার আলী ও বেনজির আলী, মসজিদের ইমাম রোকনুজ্জামান ও স্থানীয় শিশু হাফেজ সাব্বিরসহ তাঁকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয় দিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
একই কথা আগে থেকে বলে আসছেন কাওছার আলীর স্ত্রী বিলকিস নাহার, সোনালীপাড়া মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি সরাফত হোসেন জোয়ারদার, সাধারণ সম্পাদক হাসেম আলী লস্করসহ এলাকাবাসী। বাড়ির মালিক কাওছার আলী স্থানীয় মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার ছিলেন বলেও জানান তাঁরা।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় কওছার আলীর স্বজনেরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার গভীর রাতে আটক অপর তিনজন যথাক্রমে বিনছার আলী, বেনজির আলী ও শিশু হাফেজ সাব্বিরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আজ সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ঝিনাইদহ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মো. আশরাফুল বারী জানান, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য কাওছার আলী ও হাফেজ রোকনুজ্জামানকে আদালতের সময় শেষ হওয়ার পরে আনা হয়। যে কারণে তাঁদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
আশরাফুল বারী জানান, যে ধারায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তা জামিনযোগ্য। ৩৪ ধারা ছাড়া অন্য কোনো মামলা দেওয়া হয়নি বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।