হরতাল-অবরোধের পর কৃষকের ঘাড়ে সার্টিফিকেট মামলা
বছরের শুরু থেকেই টানা অবরোধ আর হরতালে পরিবহনব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য পাননি। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যে টাকা চাষে লাগিয়েছিলেন, তা-ও উঠে আসেনি। এখন সেই ঋণের টাকার জন্যই কৃষকের নামে ব্যাংক সার্টিফিকেট মামলা দিচ্ছে। আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কৃষক। তাঁদের অভিযোগ, এটা মড়ার উপর খাড়ার ঘা।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় কৃষকের নামে এমন সাড়ে তিন শতাধিক সার্টিফিকেট মামলা হয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের দাবি, সার্টিফিকেট মামলা দিলেও কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহজ কিস্তিতে ঋণ আদায়ের চেষ্টা চলছে।
উপজেলার লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম এনটিভি অনলাইনকে জানান, কলারোয়ায় ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ৩৬৬টি সার্টিফিকেট মামলা হয়েছে। এর মধ্যে তাঁর ইউনিয়নের বেশ কিছু কৃষক আছেন, যাঁদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। অন্তত ৩০ জন কৃষক গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে থাকছেন উল্লেখ করে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, অবরোধ ও হরতালের কারণে কৃষিতে ক্ষতির শিকার হওয়ায় তাঁরা ঋণ শোধ করতে পারছেন না।
উপজেলার কয়লা ইউনিয়নের কৃষক ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘আমরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যেসব কৃষিপণ্য উৎপাদন করেছি, তার উপযুক্ত মূল্য পাইনি। এমনকি খরচের টাকাও ওঠেনি।’ তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে কাঁচা শাকসবজি মাগনা বেচাকেনা করেছি। দাম না পেয়ে গরু-ছাগলকে দিয়ে সবজি খাইয়েছি। এমনকি ফেলে দিতেও বাধ্য হয়েছি। এসবের মধ্যেই সার্টিফিকেট মামলায় আমরা দিশেহারা।’
‘এখন আমাদের মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের মতোই হয়েছে। পালিয়ে কুল পাচ্ছি না,’ আক্ষেপ করে বলেন একই গ্রামের আরেক কৃষক নিশিকান্ত ।
সোনালী ব্যাংক কলারোয়া শাখার ব্যবস্থাপক মনোতোষ সরকার এনটিভি অনলাইনকে জানান, তাঁর ব্যাংকে এমন ৭০টি সার্টিফিকেট মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সার্টিফিকেট মামলা হলেও আমরা গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিস্তিতে ও কম সুদ নিয়ে তাঁদের ঋণ পরিশোধের সুযোগ করে দিচ্ছি।’
কৃষি ব্যাংক কলারোয়া শাখার ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার শাখায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে ৮৪ কৃষকের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা রয়েছে।’ তিনিও জানান, সহজ শর্তে কৃষক যাতে ঋণ শোধ করতে পারেন, ব্যাংক সে সুযোগ দিচ্ছে।
কলারোয়া উপজেলায় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কৃষকদের নেওয়া ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬৪ লাখ টাকা।
এদিকে, কৃষকদের হয়রানি বা গ্রেপ্তার করে সমঝোতার মাধ্যমে ও সহজ শর্তে ঋণ আদায়ের সুপারিশ করেছেন স্থানীয় ভূমিহীন নেতারা।