শিক্ষককে মারধরের জের

বুয়েটে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি

Looks like you've blocked notifications!
ফাইল ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে মন্তব্যের জের ধরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় এবার অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা করেছে শিক্ষক সমিতি।

এর আগে এ ঘটনার প্রতিবাদে ও দোষীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে শিক্ষক সমিতি ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে এক সপ্তাহের কর্মবিরতি পালন করে।

পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববার বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবদুল হাসিব চৌধুরী। তিনি এনটিভি অনলাইনকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। সর্বোচ্চ শাস্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দায়ীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’

‘সম্মানিত একজন শিক্ষকের ওপর গুটিকয়েক উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীর হামলা আমাদের শিক্ষকসমাজের জন্য কলঙ্কজনক। তাই সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরতে পারছি না। তবে সমাধান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা শিক্ষক সমিতির জরুরি সভা ডেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেব,’ বলেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

এদিকে, বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ্র জ্যোতি টিকাদার এনটিভি অনলাইনের কাছে দাবি করেন, ‘শিক্ষকরা ব্যক্তিগত স্বার্থে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছেন। হামলার শিকার ওই শিক্ষক জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে জড়িত। এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁর যোগও আছে। আর হামলায় আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না, বরং আমরাই ওই শিক্ষককে নিরাপদে সরিয়ে এনেছি।’

গত ১২ এপ্রিল দুপুর ১টায় বিভাগীয় অফিসে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বসেছিলেন। এ সময় বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ্র জ্যোতি টিকাদার ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ কনকের নেতৃত্বে ১৫-২০ নেতাকর্মী ওই শিক্ষককে কক্ষ থেকে বের করে মারধর করতে থাকেন। এতে জাহাঙ্গীর আলমের নাক ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে টানতে টানতে ক্যাফেটেরিয়ার ভেতরে নিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।

খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাফেটেরিয়া থেকে অধ্যাপক জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই দিন বিকেলেই শিক্ষক সমিতি বৈঠক ডেকে এক সপ্তাহের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল।

এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির প্রতিবেদন গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। প্রতিবেদনের কাজ শেষ না হওয়ায় পর তদন্ত কমিটিকে আবার ৪০ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়।

এদিকে, শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ এনে মহানগর হাকিম আদালতে নালিশি মামলা (নম্বর-১) করেন বুয়েট শিক্ষার্থী সিয়াম হোসাইন। দণ্ডবিধির ১২৪-এ ও ২৯৫-এ ধারায় তিনি মামলাটি করেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ১১ এপ্রিল জাহাঙ্গীর আলম কামারুজ্জামানের রায়ে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। মন্তব্যগুলো একটি বিশেষ ধর্মের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এবং তা রাষ্ট্রের পরিপন্থী।

ওই দিন মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান শুনানি শেষে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে নালিশি আবেদনটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দেন।