সরকারি হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসেন না চিকিৎসকরা

Looks like you've blocked notifications!
ফেনীর সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকদের অবহেলা ও অনিয়মে রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ছবি : এনটিভি

ফেনী জেলার সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। তবে ওই চিকিৎসকদেরই নিয়মিত বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বসতে দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেনীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নোয়াখালীর সেনবাগ, পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির রামগড়, চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকা থেকেও লোকজন চিকিৎসা নিতে আসেন। তবে সেবা অনিশ্চিত হওয়ায় অনেক টাকা খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

সরকারি তথ্যমতে, ফেনী জেলা সদরে একটি হাসপাতাল, প্রতি উপজেলায় একটি করে পাঁচটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ৫২টি উপকেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালে অনুমোদিত কনসালট্যান্ট, মেডিকেল অফিসার ও কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩তম বিসিএসের ৮৫ জনকে মেডিকেল অফিসার (ডাক্তার) পদে ফেনী জেলায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পদ না থাকায় ৪০ জনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি সাব-সেন্টারে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন চিকিৎসা সহকারীসহ সাতজনের একটি কর্মপরিধি রয়েছে।

জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার সরকারি চিকিৎসকরা প্রতি মাসে বেতন নিচ্ছেন মোট ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। বছরে তাঁরা মোট সোয়া কোটি টাকা বেতন নিচ্ছেন।

জেলায় অতিরিক্ত সরকারি চিকিৎকদের নিয়োগ দেওয়া হলেও সেভাবে সেবা পাওয়া যায় না বলে ভুক্তভোগীদের কয়েকজন জানান। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীর্ষ কমকর্তারা মাসের বেশির ভাগ সময় অনুপস্থিত থাকেন। এ সুযোগে কনসালট্যান্ট ও মেডিকেল অফিসাররাও কর্মস্থলে ঠিকমতো হাজির থাকেন না। মেডিকেল অফিসাররা সপ্তাহে এক-দুদিন হাজিরা দিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। কনসালট্যান্টরা মাসে এক-দুদিন কর্মস্থলে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে বেতন ভাতা তুলে নেন। এসব কনসালট্যান্ট পুরো মাসই সকাল-বিকেল ফেনীর বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক-চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগী দেখে আসছেন।

সোনাগাজী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আবদুস সবুর জানান, হাসপাতালের চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতালের বাইরে বাজারের তাঁদের চেম্বারে গিয়ে দেখা করতে বলেন। একই অবস্থা ফেনীর অন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সাব-সেন্টারগুলোতেও।

অতীতে জেলার সিভিল সার্জনরা এসব অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমকর্তা, কনসালট্যান্ট, মেডিকেল অফিসারদের নামে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েও অবস্থার কোনো উন্নতি করতে পারেননি বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেনী সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগের দুই থেকে তিনজন চিকিৎসক ছাড়া কোনো কনসালট্যান্ট ও মেডিকেল অফিসার বেলা ১১টার আগে হাসপাতালে যান না। আবার তাঁরা দুপুর ২টার আগেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।

সরকারি চিকিৎসকদের সেবায় অবহেলা ও অনিয়মের বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘অনুপস্থিত চিকিৎসকদের ব্যপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’

সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সবার কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’