বোরোর বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই

সুনামগঞ্জে বোরো ফসলের বাম্পার ফলন হওয়ার পরও কৃষকের মুখে হাসি নেই। যেখানে হাওরের চারদিকে উৎসবের আমেজ থাকার কথা, সেখানে কৃষক এখন আছেন নিজেদের একমাত্র বোরো ফসল নিয়ে হতাশায়। দুই সপ্তাহ ধরে অতিবৃষ্টি আর রোদের অভাবে হাজার হাজার কৃষকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। আগাম বন্যার আশঙ্কায় হাওরের ফসল দ্রুত কেটে আনার ব্যবস্থা করার জন্য সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ কারণে হাওরে হাওরে চলছে মাইকিং।
সুনামগঞ্জ জেলার বেশির ভাগ এলাকা হাওর অধ্যুষিত হওয়ায় বছরের অর্ধেকের বেশি সময় ফসলের খেত থাকে পানির নিচে। তাই অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে হাওর থেকে পানি চলে গেলে বোরো ধান লাগানো হয়। সাধারণত বৈশাখ আসার সঙ্গে সঙ্গেই হাওরাঞ্চলে ঠা ঠা রোদ মাথায় নিয়ে ধান কাটেন কৃষক। সোনালি ধান মাথায় নিয়ে স্তূপ করে রাখেন। মাড়াই করে হাওরের পাশেই শুকিয়ে বিকেলে ধান নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
এবারে চিত্র ভিন্ন। বৈশাখ আসার সঙ্গে সঙ্গে ধান কাটা শুরু হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে তা ভেস্তে যাচ্ছে। ফলে বাম্পার ফলন হওয়ার পরও ধান কেটে সেই ধান গোলায় তুলতে পারছেন না কৃষক। যা-ও কেটে এনেছেন, তা রোদের অভাবে শুকাতে পারছেন না। ফলে হাওরবাসীর একমাত্র ফসল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। আর এত কষ্টের পরও যে পরিমাণ বোরো ধান পাবেন, সেই ধানের ন্যায্যমূল্য দবি করেছেন কৃষকরা।
এক কৃষক বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্য হলো রোদ নাই। আমি তিন ভাগের এক ভাগ ধান কাটাইছি। কিন্তু শুকাইতে পারতেছি না। সাধারণত আমরা মাটিতে ধান শুকাই। মাটি শুকানোর পথ নাই, ধান শুকানোর পথ নাই। এমন অবস্থায় ফসলের খুব কঠিন অবস্থা। কৃষকের মুখে হাসি ফুটলোনি যদি এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকত। তবু দেখা যাক বাকি দিনগুলো কিতা ঘটে। আশা করা যায়, যদি রোদ দেয় ফসল খুবই ভালো হবে।’
এ সম্পর্কে সুনামগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাহিদুল হক বলেন, ‘এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ১৪ হাজার ৪৫৬ হেক্টর জমি। কিন্তু সারের সুলভ মূল্য এবং কৃষক সহজলভ্যতার কারণে আবাদ হয়েছে দুই লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫ হেক্টর। এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে।’
‘গত বছর আমাদের খাদ্য উদ্বৃত্ত ছিল পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ৩৫০ টন। এ বছর আবাদ বৃদ্ধি এবং ফলন বৃদ্ধির কারণে আরো ১৫ হাজার ৫০০ টন উদ্বৃত্ত হবে বলে আশা রাখছি,’ যোগ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
মোহাম্মদ জাহিদুল হক বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়া ও অতিবৃষ্টির কারণে এবং শ্রমিকের অভাবে ধান কাটা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। এরই মধ্যে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকে, তাহলে ৭০ পার্সেন্ট (শতাংশ) ফসল কাটা হবে বলে আমরা আশা করছি।’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যতদূর কৃষকের সঙ্গে কথা বলেছি এবং নিজে খেতে গেছি, গতবারের চেয়েও এবার ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু এখানে যেটি হয় যে আরলি ফ্লাড (বন্যা) এসে ধান নষ্ট করে। বৃষ্টিপাত প্রথম দিকে অতটা হয়নি, এখন বৃষ্টিপাতের পরিমাণটা বেশি। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের পানির যে লেভেল, তা সহনীয় মাত্রায় আছে। এখনো প্রায় পাঁচ ফুটের বেশি ডেঞ্জার লেভেলের নিচে আছে।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ধান দ্রুত কেটে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা অলরেডি (এরই মধ্যে) ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি। সব ইউএনওকে চিঠি দিয়েছি। সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ডেকে বলেছি এলাকায় এলাকায় মাইকিং করতে, হাওরগুলোতে মাইকিং করতে, যাতে কৃষক পাকা ধান দ্রুত কেটে বাড়ি তুলতে পারেন।’