আইনি জটিলতায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না
আইনি জটিলতার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক দেশেই অনেক আইনের জটিলতা রয়েছে। সেজন্যই আমরা, বঙ্গবন্ধুর খুনিরা যেখানে সেই জায়গা থেকে আনতে পারছি না। আমাদের সবসময়ই নেগোসিয়েশন (আলোচনা) চলছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেই ব্যাপারে কাজ করছেন।’
২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নূর চৌধুরী ও সাবেক মেজর বজলুল হুদা সরাসরি বঙ্গবন্ধুকে গুলি করেন। বজলুল হুদার মৃত্যুদণ্ডাদেশ এরই মধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। নূর চৌধুরী এখনো পলাতক। অপর পলাতক আসামিদের মধ্যে সাবেক সেনাসদস্য ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ ভারতে পলাতক রয়েছেন।
তবে এ ব্যাপারে কোনো সঠিক সরকারি তথ্য নেই। অপর পলাতক আসামিরা হলেন বরখাস্তকৃত লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশীদ এবং শরিফুল হক ডালিম। ঢাকায় পররাষ্ট্র দপ্তর এর আগে পলাতক আসামিদের মধ্যে জিম্বাবুয়েতে বরখাস্তকৃত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজিজ পাশার স্বাভাবিক মৃত্যু নিশ্চিত করে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে এবং ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। এই কালো আইনের জন্য এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার বাধাগ্রস্ত হয়। সর্বোচ্চ আদালত আপিল ডিভিশনের রায়ের পর ১০১০ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তাঁরা হলেন সাবেক লে. কর্নেল ফারুকুর রহমান, মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) শাহরিয়ার রশীদ খান এবং এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যাঞ্চার) ও সাবেক মেজর বজলুল হুদা। ঢাকা ও ব্যাংককের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষরের পর হুদাকে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে প্রত্যাবাসন চুক্তি না হলেও সাবেক সামরিক সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বরখাস্তকৃত লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র ফিরিয়ে দেয়।
১৯৭৫ পরবর্তী সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে বিভিন্ন মিশনে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। ১৯৯৬ সাল পযর্ন্ত তাঁরা নানা ষড়যন্ত্র ও দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে এসে কালো আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের পথ প্রশস্ত হয়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশেদ চৌধুরী ১৯৮৪ সাল পযর্ন্ত নাইজেরিয়ায় কনসুলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সর্বশেষ বদলি হয় টোকিওতে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণ করে।
রিসালদার মোসলেউদ্দিনকে তেহরান ও জেদ্দায় পোস্টিং দেওয়া হয়। ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাসেম অটোয়ায় এবং লেফটেন্যান্ট আব্দুল মজিদ ত্রিপোলিতে কূটনীতিক হিসেবে চাকরি পান।
বাসস জানায়, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আব্দুল আজিজ পাশা রোমে বাংলাদেশ মিশনে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ পান। আজিজ পাশা ১৯৮০ সালের ১৭ জুন অভ্যুত্থান ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকায় গ্রেপ্তার হন। পরবর্তী সময়ে তিনি অভ্যুত্থান সম্পর্কে সাক্ষ্য দিতে সম্মত হওয়ায় সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেন। তাঁকে রোমে কূটনীতিকের চাকরি দেওয়া হয়। আজিজ পাশা নাইরোবিতেও দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সর্বশেষ পোস্টিং ছিল জিম্বাবুইয়ে ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পাশা জিম্বাবুয়েতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ২০০১ সালের ২ জুন মারা যান। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর পাশাকে মরণোত্তর চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয় এবং তার পরিবারকে পেনশনসহ সব সরকারি সুবিধা দেওয়া হয়। তাঁকে চাকরি থেকে অবসর দেখানো হয়।