চট্টগ্রামে ডিএপিতে গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণ

গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে : বিসিআইসি চেয়ারম্যান

Looks like you've blocked notifications!
চট্টগ্রামে ডাই অ্যামুনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. ইকবাল (ডানে)। ছবি : এনটিভি

চট্টগ্রামে ডাই অ্যামুনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানার গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণের ঘটনায় কারখানার কোনো কর্মীর গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনটিই জানিয়েছেন বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান মো. ইকবাল। 

আজ মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাটি দেখতে এসে সাংবাদিকদের এ কথা জানান চেয়ারম্যান। তাঁর সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আলী ও  চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মেজবাহ উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। 

বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. ইকবাল শুরুতেই সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান সঠিক তথ্য জনগণকে অবহিত করায়। তিনি জানান,  কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করতে বিসিআইসির পক্ষ থেকে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষ ও বিচক্ষণ বলে দাবি করেন তিনি।

বিসিআইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে পারি এ ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য যেসব প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তারা তা নেবে। একই সঙ্গে কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলা ও দায়িত্ব পালনে গাফিলতি থাকলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ বিপর্যয় ঠেকাতে যেসব সংস্থা তাদের সহযোগিতা করেছে ভবিষ্যতেও সবাই মিলে এক সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। 

এ ঘটনার প্রকৃত কারণ নির্ণয় করতে কারিগরি কমিটি কাজ শুরু করে দিয়েছে উল্লেখ করে মো. ইকবাল বলেন, ‘প্রাথমিক প্রতিবেদনের আগে কোনো মন্তব্য না করাই ভালো। এখানে অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করতে হয়। অন্য কোনো কারখানার মতো এটি নয়। শতভাগ নিশ্চিত হয়ে আমরা সবসময় কাজ করি।’

সার উৎপাদনকারী এ কারখানার নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে কি না বা হুমকি আছে কি না, তা প্রতিনিয়ত মনিটর করেন জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটি সর্বাধুনিক একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে নিয়মিত ডাটা মনিটর করা হয়। আমরা ঘটনার কারণ নির্ণয় করার চেষ্টা করছি। তত দিন যেন সবাই ধৈর্য ধারণ করতে পারেন।’ 

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘এখানে যাতে গুজব না ছড়ায় সে দিকে প্রশাসন কাজ করছে। এটি একটি দুর্ঘটনা, আমরাও তা মনে করছি। এরপরও অন্য কোনো কারণ আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে এ প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মী জড়িত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে। যদি এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় সরকারের কাছে লিখিতভাবে জানানো হবে। তবে এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। গোয়েন্দা সংস্থা এখানে কাজ করছে।’ স্থানীয় জনগণ সবার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সরকারকে অবহিত করার কথা জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক জানান, দুর্ঘটনা পরবর্তী পদক্ষেপে ফায়ার সার্ভিসের অবদান বেশি। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। এ ক্ষেত্রে বিএসইসিও সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসবে বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আলী এ ঘটনা সমন্বয় করার জন্য জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনকে ধন্যবাদ জানান। আর ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নদীর দুই পাড়ে আক্রান্ত জনগণকে উদ্ধার করেছে। শেষ পর্যন্ত এ বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবে, তারা ডেডিকেটেড। মানুষের যেকোনো প্রয়োজনে তারা সব সময় কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। 

গতকাল রাত ১০টার দিকে ডাই অ্যামুনিয়াম ফসফেট সার কারখানার একটি প্ল্যান্ট বিস্ফোরিত হয়ে বাতাসে অ্যামোনিয়া গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এতে আনোয়ারা উপজেলা ও এর পাশের অনেক এলাকার অর্ধশতাধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট গ্যাস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। গ্যাস নিঃসরণ এবং ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে পানি ছিটিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

এই ঘটনায় রাতে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোমিনুর রশিদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন।